টিলা আর অরণ্য ঘেরা সিকৃবি ক্যাম্পাসে শীতের অন্য রকম অনুভূতি

Category: কৃষিবিদ ও ক্যাম্পাস Written by agrilife24

এস এম রায়হানূল নবী,সিকৃবি প্রতিনিধি:‘বৃক্ষের পদতলে জীর্ণ পত্রের অশেষ উৎসব বাতাসে কিসের গন্ধ কাদের সংগীত একদিন ঘুম ভেঙে দেখি এসে গেছে শীত।’হ্যাঁ, প্রকৃতিতে সত্যিই শীত এসে গেছে। তবে কবির কল্পনার মতো এতো সহজেই শীত আসেনি। সময়ের পরিক্রমায় শীত এসেছে পাঁচ ঋতু অর্থাৎ দশ মাসের বিরতির পর। হেমন্তের বিদায়ী লগ্নে প্রকৃৃতিতে এখন শীতের হাতছানি। কিন্তু তা যেন বুঝবার উপায় নেই। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়(সিকৃবি) ক্যাম্পাসে এখন যেন ভরা শীতকাল।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি এখানকার অধিবাসীদের অকৃত্রিম ভালোবাসা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক গ্রামে পরিণত করেছে। তাই সিকৃবির শীতের আগমন কোনোভাবেই গ্রাম থেকে আলাদা নয়।

সবুজের নৈস্বর্গিক শোভামন্ডিত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শীত আসে চিরচেনা রূপের বাইরে আরও কিছু মুগ্ধতা নিয়ে। আসে অনবদ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এবারও সারাদেশের মতোই সিকৃবিতে  শীত এসেছে আগেভাগেই। তবে তাতে ক্যাম্পাসে শীতের যে বর্ণিল রূপ তাতে একটুও ছেদ পড়েনি।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃৃতি ও পরিবেশটা অনেকটাই গ্রামীন আবহে তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার পাশ দিয়ে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য টিলা। গ্রামের শীতের আমেজ পেতে ঘুরে আসা যেতে পারে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

শীতের আগমন টের পাওয়া যায় গোধূলির সোনালি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই ঘন কুয়াশার চাদরে আঁকড়ে ধরা প্রকৃতির দিকে তাকালে। হাড়ে কাঁপন ধরানো হিমেল বাতাসে ক্যাম্পাসের সবার গায়েই এখন শীতের গরম কাপড়।

ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্র জুয়েল রানা বলেন, চারদিকের টিলা আর অরণ্য ঘেরা ক্যাম্পাসে শীতের সময়টা অন্য রকম অনুভূতির জন্ম দেয়। সবকিছুকেই যেন শীতের কুয়াশা তার বিশাল চাঁদর দিয়ে ঢেকে এক মায়াবী হাতছানির সৃষ্টি করে। সকালে শিশির ভেজা রাস্তা মারিয়ে গরম কাপড় জড়িয়ে ক্লাস করতে যাওয়াটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য। বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা বেশ জমে।

ভেটেরিনারি অনুষদের মাস্টার্স’র ছাত্র ডা.সাখাওয়াত হোসেন  বলেন, ক্যাম্পাসে শীতের পরিবেশ বেশ উপভোগ করি। রাস্তার দুই পাশের ফুল গাছ আর লেক ভরা লাল শাপলা আমাকে খুব মুগ্ধ করে।

সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সিকৃবি ক্যাম্পাসের পিঠা। দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব দোকানে পাওয়া যায় শীতের বিভিন্ন রকম পিঠা। আর শীতের এই পিঠার স্বাদ নিতে সারাক্ষণ এসব দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।

শীতের রুক্ষ আর শুষ্ক প্রকৃৃতি নাকি রঙ-রূপ হীন!  অথচ প্রকৃৃতির প্রাচুর্যতায় ভরপুর এ ক্যাম্পাসটিতে রূপ লাবণ্যের কোনো ঘাটতি হয় না কখনোই। শীতে ক্যাম্পাসটির প্রকৃতি ও পরিবেশ সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে। প্রতিটি রাস্তার দুই পাশ ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে। লেকগুলোও ভরে উঠেছে লাল শাপলায়।

সিকৃবির বিভিন্ন হল এর সামনে তৈরি করা হয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে খেলা। সন্ধ্যা হলেই হলের গেম রুমে সময় কাটায় অনেক শিক্ষার্থীরা। অনেকেই টেবিল টেনিস, ক্যারম, দাবা, কার্ড খেলার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। মেয়েদের হলেও দাবা ক্যারম বা লুডুর মতো বিভিন্ন ইনডোর গেম চলে সময় কাটানোর ব্যবস্থা হিসেবে।

অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই শীত মানে ফ্যাশন। রং-বেরঙের ড্রেস পরে সময় কাটানোর সুযোগ বছরের অন্য কোনো  ঋতুতে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কেউ কেউ আবার ঘুরতে চলে যান একেবারে নেটওয়ার্কের বাইরে। শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যাচমেটদের সঙ্গে নিয়ে দেশের নানা দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করেন। এর ফলে সুন্দর কিছু সময় কাটানোর পাশাপাশি হয়ে যায় নিজের দেশকে জানা ও দেখার কাজটি।