শিক্ষার্থীদের হৃদয় রাঙাচ্ছে বাকৃবির টিএসসি

Category: কৃষিবিদ ও ক্যাম্পাস Written by agrilife24

আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি:স্কুল, কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে যখন একজন শিক্ষার্থী প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায়, এরপর শুরু হয় তাদের জীবন সম্পূর্ণ নতুন আর ভিন্ন একটা গল্প। যে গল্পে এমন এমন কিছু মধুর স্মৃতি থেকে যায়, যা আগামী জীবনে কখনো ভোলা সম্ভব না। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, রাতের নিস্তব্ধ রাস্তায় হাঁটা, একসাথে বসে চা খাওয়া, উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা সহ আরো অনেক পাথেয় সংগ্রহ করতে থাকে এই শিক্ষার্থীরা।

সারাদিন ক্লাস, প্র্যাকটিক্যাল, ল্যাব খাটুনির পর যখন একটু মানসিক প্রশান্তির দরকার হয়, তখন আড্ডা বা সবাই মিলে গান গাওয়া চা খাওয়াটা বেশি প্রাধান্য পায়। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র বা টিএসসি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রাণচঞ্চল ও কর্মব্যস্ত স্থান হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। একটি টিএসসি যেন হাজারো শিক্ষার্থীর প্রাণের স্পন্দন। একটি টিএসসি কয়েক প্রজন্মের রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন।

আর সেই টিএসসিকে মনোরোম করতে যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহযোগিতা করে তাহলে ত কথাই নেই। সেরকম আদলেই নতুন রূপে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) টিএসসি। করোনাকালীন সময়ে প্রায় দেড় বছরের মতো শিক্ষার্থীরা ঘরে অবস্থান করেছে। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজও হচ্ছিল। ব্যাস, ব্যাটে বলেই মিলে গেলো। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে আস্তে আস্তে টিএসসি তার নতুন রূপ ধারণ করেছে। এতদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের যেনো সবকিছু অপরিচিত অপরুপ লাগছে।

টিএসসিতে আসতেই প্রথমেই চোখে পড়বে বড় একটি নামফলক, যা একদম নতুন করে করা হয়েছে। পাশেই করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মুরাল। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করেন, সেই ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে মুরালে। টিএসসিতে এসেছেন কিন্তু এখানে ছবি তোলেননি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। রাস্তা ধরে এগিয়ে যাবার সময় হঠাৎ চোখ থেমে যাবে 'টিএসসি লেক ভিউ' ফলকটি দেখে। শিক্ষার্থী, দর্শনার্থীদের ছবি তোলার অন্যতম আকর্ষণ এটি।

লেকভিউ তো নয়, যেন পার্ক। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য প্রশান্তির এক জায়গা। রয়েছে বসার জন্য টাইলস দিয়ে বাঁধাই করা আসন, মোজাইক করা হাঁটার রাস্তা, রয়েছে মুক্তমঞ্চ ও বারবিকিউ জোন। প্রায় দুই শতাধিক মানুষ একসাথে বসতে পারবে সেখানে। বাহারি ফুলের চারা শোভা ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, জন্মদিন বা চড়ুইভাতির আয়োজনে তাই আর কোনো দ্বিতীয়বার ভাবনার প্রয়োজন হয়না।

পুরোনো দুইটি ফোয়ােরা সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে আরেকটি পানির ফোয়ারা বানানোর কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। ফোয়ারা লাগানো হয়েছে লেকের মাঝেও। সেখানে দেয়া হয়েছে নতুন বোট। অবসরে অবেক্ষণে বা মন ভালো করতে যার জুড়ি নেই। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে লেকের চারপাশেও। রাতের কৃত্রিম আলোয় আরো চমৎকার হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গন।



নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে ক্যাফেটেরিয়াতেও। টিএসসি ক্যান্টিনে নতুন চেয়ার, টেবিল সংযোজন করা হয়েছে। পুরো ক্যান্টিনজুড়ে করা হয়েছে ডেকোরেশন। বাইরে মুক্ত পরিবেশে চা, কফি পানের জন্য করা হয়েছে 'ক্যাফে চত্বর'। সর্বত্রই শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে এই প্রাঙ্গন। টিএসসি সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখতেও রয়েছে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন, রয়েছে হাত ধোয়ার একাধিক স্থান।

বাকৃবির শিক্ষার্থীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন এই টিএসসি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীরা। পাশাপাশি প্লাটফর্ম, কেআর মার্কেট, নদীর ধার, আমবাগানের পর নতুন একটি ঘোরার জায়গা পেয়ে অনেক খুশি শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের বর্ষের শিক্ষার্থী জহুরুল হক বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাড়িতে থাকার সময় থেকেই শুনছি টিএসসি নতুনভাবে সাজানোর কথা। ক্যাম্পাসে এসে দেখে অভিভূত হযেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টিএসসিকে চমৎকারভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।

টিএসসিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ। এবিষয়ে সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব করে গড়ে তুলতে, তাদের হৃদ বন্ধন মজবুত করতে টিএসসি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের বিকশিত করতে, মানসিক বিকাশ সাধন করতে পারে, এটাই মূল লক্ষ্য।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, টিএসসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মিলনমেলা। তাই এই স্থানটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলেছি যেন তারা পড়াশোনার পাশাপাশি মুক্তচিন্তা চর্চা, সাংস্কৃতিক দক্ষতা বৃদ্ধি হয়। টিএসসি অধিভুক্ত সংগঠনগুলোও তাদের কার্যক্রমকে আরো সুন্দরভাবে করতে পারবে এবং আরো বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর সম্পৃক্তা বাড়বে। মাননীয় উপাচার্যের পৃষ্ঠপোষকতা, আন্তরিকতা ও দিকনির্দেশনায় আমরা টিএসসিকে নান্দনিক রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি। এটি নিয়ে আমাদের আরো অনেক পরিকল্পনা রয়েছে, ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করা হবে।