খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিবেচনায় আসন্ন বাজেটে পোল্ট্রি শিল্প বান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে

Category: বিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রি Written by agrilife24

বিজনেস ডেস্ক:খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিবেচনায় আসন্ন বাজেটে পোল্ট্রি শিল্প বান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাজেটে কর অবকাশ এবং নীতি সহায়তা না পেলে পোল্ট্রি শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন শিল্পের সাথে জড়িত সকল পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার ও কৃষি অর্থনীতিবিদগণ। বিশ্লেষকগণ চলতি বাজেটে পোল্ট্রি শিল্প বান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। নিম্ন আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের বড় উৎস ডিম এবং মুরগির মাংসের বাজার মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এখনই বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে; না হলে গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে দেশের পোল্ট্রি শিল্প।

দেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ডিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে মোস্তফা মাহবুব-এর এক প্রতিবেদনে।

প্রানিখাদ্য উৎপাদনের প্রধান উপাদান সয়াবিন মিল, ফিশ মিল ও ভুট্টাসহ প্রায় প্রতি কাঁচামালের দাম মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খামারিরা যেমন লোকসান দিয়ে যাচ্ছেন তেমনি ফিড মিলার থেকে হ্যাচারিসহ সকলেই লোকসান গুণছেন।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি জনাব শামসুল আরেফিন খালেদ (অঞ্জন) বলেন, খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের ফ্লাকচুয়েশনের কারণে প্রতি কেজি খাবার তৈরিতে ২-৩ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ফিড মিলারগণ। এছাড়া যারা একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করছে তারাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান তিনি।



ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি জনাব কাজী জাহিন হাসান বলেন, বর্তমান খাদ্যের দাম হিসেবে প্রতিটি মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ৩৫ টাকার মতো সেখানে ১০-১৫ টাকায় বাচ্চা বিক্রয় করে কতদিন ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব?

বিগত দুই বছরে পোল্ট্রি শিল্পের যেকোনো যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১০ শতাংশের উপর ট্যাক্স আরোপিত হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি জনাব মসিউর রহমান বলেন, অন্য যেকোনো শিল্পের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে মাত্র এক শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। যেখানে ইতিপূর্বে পোল্ট্রি শিল্পের জন্য মূলধনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে কোনরূপ ট্যাক্স ছিল না। এমনকি কৃষকরা যে ভুট্টা উৎপাদন করে ক্রয় করে, রাইস পলিশ ক্রয় করে তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করেন মশিউর রহমান।



কৃষি অর্থনীতিবিদ ড: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডিম এবং মুরগির মাংসের দাম যাতে বেশি না বাড়ে এবং ভোক্তারা যাতে এটা বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে সেই ধরনের নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। বিগত দুই বছরের উদাহরণ টেনে বলেন এ সময় ছোট খামারি যারা আছে তারা টিকে থাকতে পারে নি। তারা উৎপাদনের বাহিরে চলে গেছে কাজেই তাদেরকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হলে সরাসরি তাদের/খামারিদের প্রণোদনা দিতে হবে এবং এটি চলতি বাজেটের মধ্যে সংযুক্ত করার কথা বলেন বিশিষ্ট এই কৃষি অর্থনীতিবিদ। এছাড়া সব ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্স প্রত্যাহারের কথা যোগ করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ জনাব ড. জাহাঙ্গীর আলম।

সংকট সমাধানে এখন তাই বাজেটের দিকে তাকিয়ে পোল্ট্রি শিল্পোদ্যাক্তারা। ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা, ৪.৫% সুদে ব্যাংক ঋণের সুবিধা, সহজ শর্তে পূর্বের ঋণ পূর্:তফসিলীকরনের সুবিধা। পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরি খাদ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর, উৎসে কর, ভ্যাটসহ সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার। পোল্ট্রি শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারসহ পোল্ট্রিবান্ধব নীতি সহায়তা চেয়েছেন উদ্যোক্তারা।

পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচাতে বাজেটে নীতি সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। চলতি বাজেটে কাঙ্ক্ষিত সহায়তার ঘোষণার না মিললে পোলট্রি শিল্প ধ্বংসের আশঙ্কা ছোট খামারি থেকে শুরু করে বড় বড় পোল্ট্রি উদ্যোক্তাদের। নিম্ন আয়ের মানুষের সুলভ মূল্যের আমিষের চাহিদা পূরণের উৎস টিকিয়ে রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অবকাশসহ পোল্ট্রি শিল্পের নীতিগত সুবিধা চান পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট পেশাজীবিগণ।