পোল্ট্রির ও ডেইরীর নানাবিধ রোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় খামারিদের মাঝে মান সম্পন্ন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ঔষধ সরবরাহ অপরিহার্য

Category: বিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রি Written by agrilife24

বিজনেস প্রতিবেদক:আমাদের দেশের যে কয়টি সেক্টর অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে তার মধ্যে পোল্ট্রি ও ডেইরি সেক্টর অন্যতম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এই সেক্টরগুলো বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। নিত্যনতুন রোগ-বালাই-এর আবির্ভাব, কাঁচামালের উর্ধ্বগতি ও দুস্প্রাপ্যতা সেক্টরের গতি একরকম মন্থর করে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের খামারীদের নিয়ে সত্যিকার অর্থে কিছু করার ও ভাববার। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাইলে খামারিদের মাঝে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে কার্য্যকর ও নিরাপদ ক্যারিয়ার দিয়ে উৎপাদিত ঔষধ সরবরাহ করতে হবে যাতে করে খামারীরা সঠিক মাত্রায় ঔষধ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ মাত্রায় উপকৃত হয় এবং যথা সম্ভব কোন প্রকার সাইড ইফেক্ট ছাড়া, কম সময়ের উইথড্রল সম্পন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহারে খামারীদের উৎসাহিত করতে হবে।

রবিবার (১৫ মে) দিনব্যাপি রাজধানী ঢাকায় উত্তরার অভিজাত হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস ম্যাপল লিফ এর ট্যারাগন রেস্টুরেন্টে “Impact of the Pharmaceutical Formulations in Successful Treatments” শীর্ষক এক কারিগরী সেমিনারে এসব কথা বলেন ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা। এনিম্যাল হেলথ্ সেক্টরে খামারীদের নিকট জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিমিটেড-এই সেমিনারের আয়োজন করে। দেশের পোলট্রি ও ডেইরি শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেক হোল্ডাররা ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্বনামধন্য ভেটেরিনারিয়ানরা এতে অংশগ্রহন করেন।



বিশেষজ্ঞ বক্তারা বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক খামারি রয়েছেন যারা গতানুগতিক ধারায় পোল্ট্রি পালন করছেন। কিন্তু বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ আসছে তাকে মোকাবেলা করতে আমাদেরকে এ ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। খামারীদের কাছে নতুন নতুন কিছু দিতে হবে এর পাশাপাশি এই সেক্টরের সাথে জড়িত সকল স্টেকহোল্ডারদেরও এগিয়ে আসতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের খামারীদের ধরে রাখতে হলে সঠিক ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় সর্বোচ্চ  মানসম্পন্ন পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। প্রান্তিক বলেন আর বৃহত্তর খামার বলেন সর্বক্ষেত্রে  ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকা অনেক। পেশাদারিত্বের মনোভাব বজায় রেখে তাদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।



সেমিনারে ভেটেরিনারি মেডিসিনের জন্য খ্যাতনামা ইউরোপের রোমানিয়ার বিখ্যাত কোম্পানী Delos Medica-এর Export ও Technical Director Dr. Alexandru Baciu Mircea, DVM মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি Delos Medica-Medica-এর কার্যক্রম, মিশন ও ভিশন সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন।



Dr. Alexandru বলেন, ডেলোস মেডিকা বিশ্বের ১৪টিরও বেশি দেশে তাদের উৎপাদিত ভেটেরিনারি পণ্য সফলভাবে সরবরাহ করে আসছে। এসময় তিনি Bromex (Enrofloxacin 20%+ Bromhexin HCL 1.5%), Florfenidem 10 ( Florphenicol 10%), Tilmicodem 25( Tilmicosin 25%), ব্র্যান্ডের তিনটি পণ্যের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। এই পণ্যগুলো উৎপাদন, উন্নয়ন এবং গবেষণায় তাদের রয়েছে সুদীর্ঘ ১৮ বৎসরের অভিজ্ঞতা। তাদের ফ্যাক্টরিটি ২০০৮ সালেই জিএমপি সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হয়েছে যেখানে তাদের তিনটি প্রোডাকশন লাইন রয়েছে যার মাধ্যমে ওয়াটার সলিউবল প্রিমিক্সেস, ওরাল সলিউশন ও  ট্যাবলেট উৎপাদন করছে। এছাড়া  তাদের ইনজেকটেবল এর জন্য ভিন্ন একটি লাইনও রয়েছে। উৎপাদন থেকে কাস্টমার পর্যন্ত তাদের উৎপাদিত পণ্য পৌঁছাতে সব ক্ষেত্রেই তাদের রয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমাহার। Delos Medica ইউনিক ক্যারিয়ার ব্যবহার করে ইউনিক ফরমুলেশনের মাধ্যমে সঠিক মাত্রায় পোল্ট্রি ও লার্জ এনিমেলের সবচাইতে কম সাইড ইফেক্ট সম্পন্ন ও কার্য্যকর ঔষধ উৎপাদন করে আসছে যা ইতিমধ্যে খামারিরা উপকৃত হয়েছেন। গরম ও শীতকালে পানি পানের পার্থ্যক্যের কারনে ঔষধ ব্যবহারের অপচয় রোধে গতানুগতিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে নতুন এক ফরমূলা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। যার মাধ্যমে খামারীরা এবং ভেটেরিনারিয়ানরা পানি কম বেশী যাই লাগুক না কেন প্রতিদিনের ঔষধের মাত্রা সঠিক পরিমানে দেয়া সম্ভব হবে ফলে উৎপাদন, ওজনে কোন সমস্যা হবেনা এবং অতিরিক্ত ঔষধের মাধ্যমে অর্থের অপচয়ও হবেনা। এখন থেকেই এই প্র্যাকটিস শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে সকল খামার মালিক, স্টেক হোল্ডারদের ভেটেরিনারিয়ানরা এই ফরমূলা প্রয়োগে উৎসাহিত করবেন।



আলোচনায় অংশ নিয়ে সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ  সরোয়ার জাহান Delos Medica-থেকে আমদানিকৃত নতুন পণ্য Vermicid 10 (Albendazole 10%) কার্যকারিতা ও নতুনত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রথাগত লিভামিজল (মেইনলি ফিতাকৃমিনাশক), পাইপেরাজিন (গোল কৃমিনাশক) ব্যবহারে কৃমি দমনে যেমন হাফ ট্রিটমেন্ট হয়, অন্য দিকে ডিম উৎপাদনে ও দৈহিক ওজনেও সমস্যা করে। তাই সম্পূর্ণ কৃমি দমনে  Albendazole একমাত্র সঠিক চয়েজ যা একই সাথে ফিতাকৃমি,গোলকৃমি সহ সকল ধরনের কৃমির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্য্যকর। পাশাপাশি এটা কিছুটা টেস্টি এবং খুবই নিরাপদ নরমাল ডোজের ৫গুণ ব্যবহার করলেও ডিমের উৎপাদন ও ওজনে কোন হেরফের হয় না। Vermicid 10 ইতিমধ্যে খামার মালিকদের এবং ভেটেরিনারিয়ানদের নতুন আশার সঞ্চার করেছে।  

প্রেজেন্টেশন শেষে তিনি ও Dr. Alexandru আগত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।

সেমিনারে আগত অতিথিরা বলেন,আমাদের দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে হলে প্রাণিসম্পদকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হলে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে আমাদের সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। খামারীদেরকে লাভ-লোকসান প্রত্যেকটি  গুনতে হয় যেটা এই সেক্টরের অন্যদের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে না। বিষয়টির প্রতি সকলের খেয়াল রাখার আহবান জানান অতিথীরা।



সেমিনারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক (প্রশাসন) ও ডায়মন্ড এগ গ্রুপের এডভাইজার ডা. এ.কে.এম আতাউর রহমান, গাজীপুরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম উকিল উদ্দিন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক পিএসও ও খামারীদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় পোল্ট্রি কনসালট্যান্ট ডা.অখিল চন্দ্র, বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ-এর সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার মো. মহসিন বক্তব্য প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে আগত পোল্ট্রি কনসালট্যান্টগণ মনে করেন, সেমিনারে আলোচিত পণ্যগুলি মাঠ পর্যায়ে খামারীদের বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এজন্য তারা  ডা. মোহাম্মদ  সরোয়ার জাহান ও সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিঃ কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিঃ এর চেয়ারম্যান মো. রহিম শিকদার, পরিচালক গাজী জাফর আহমেদ ও মো. জাহিদ হোসেন সহ কোম্পানীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।