খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার ও অন্তর্ভুক্তির উপর বিশেষজ্ঞগনের গুরুত্ব আরোপ

Category: ফার্ম টু ডাইনিং Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: ভবিষ্যতের খাদ্য-পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নে  কৃষিতে জীব প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে - এমনটাই আশা করেছেন বিশেষজ্ঞগণ। আজ ২৮ জুন প্রথম আলো মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত, “বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য কৃষি উদ্ভাবন এবং কৃষি জৈব প্রযুক্তি” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় একথা উল্লেখ করেন শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগণ।

সভায় এগ্রিকালচারাল বায়োটকেনোলজি বা কৃষিতে জীবপ্রযুক্তি সর্ম্পকে ধারণা এবং সংশ্লিষ্ট  নীতিসহ টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা  নিশ্চিত করতে প্রমান-ভিত্তিক জ্ঞান এবং তথ্যনির্ভর নীতি প্রণয়ন গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া হয়। সরকারী ও বেসরকারী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির প্রধান বিশেষজ্ঞরা, উন্নয়ন অংশীদাররা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে কৃষিতে জীবপ্রযুক্তি তাৎপর্য তুলে ধরে খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে কৃষি উদ্ভাবন সম্পর্কে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।

অধ্যাপক ড. রাখ হরি সরকার, তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় কৃষিতে জীব প্রযুক্তির ব্যাবহারের সাথে সমন্বয়সাধন করার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, কৃষি এবং আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য এবং কৃষির উন্নতিকল্পে আমাদের অবশ্যই সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ''পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যে হারে বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে কিন্তু  হচ্ছেউৎপাদন হচ্ছে না। তাই বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা হচ্ছি,  প্রতিকূল এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি জীবপ্রযুক্তিতে এখনই বিনোয়োগ করা প্রয়োজন,''  তিনি বলেন।  

অ্যালায়েনন্স ফর সায়েন্স- এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর অব পলিসি এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফের্য়াস, গ্রেগরি জেফ, এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বিশ্বব্যাপী বর্তমান বায়োটেক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করেন এবং বাংলাদেশে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তার মতামত দেন।  তিনি বলেন, ”বাংলাদেশ এখন নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানি করছে, সেই সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু কৃষি অবকাঠামোতে আরো উন্নয়নের সুযোগ আছে। এর সাথে সাথে বাংলাদেশে জৈব নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুসমন্বয়সাধনের ওপর আরও বেশি গুরুত্বের কথা বলেন ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম বলেন কৃষিতে অর্জিত সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এবং লাগসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ কৃষকের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কৃষিতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি গ্রহণ ও এর সম্প্রসারণ ওপর নির্ভর করে দেশের খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যনিরাপত্তা। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর বলেন, দেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কৃষিখাত সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। সকলের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দারিদ্র্যবিমোচন করতে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যাবহার এখন সময়ের দাবি। আর বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতে উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে দেশের খাদ্য চাহিদা আগে মেটাতে হবে।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞগণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এবং ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, ”বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে এবং দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অন্যান্য কৃষি উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবপকভাবে গ্রহণ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।  

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে, অংশগ্রহণকারীরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। কৃষি জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কৃষি জীবপ্রযুক্তি যে আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, সেইসব বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে, বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি উদ্ভাবন ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থার কার্যকরী উপায় নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় গোলটেবিল আলোচনায়।