কৃষিতে প্রযুক্তিগত সহায়তার লক্ষ্যে গবেষণা প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল)

Category: সমসাময়িক Written by agrilife24

দীন মোহাম্মদ দীনু।। বাংলাদেশের কৃষিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন উন্মোচনের লক্ষ্যে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-এর গবেষণা প্রকল্পে ২কোটি টাকা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল)। শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে এসংক্রান্ত তিনটি গবেষণা প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ফল ও সবজির সংরক্ষণ ক্ষতি কমানো, তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন বাড়ানো ও মুরগির এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দেশীয় স্ট্রেইন নিষ্ক্রিয়করণ করে ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে গৃহীত গবেষণা প্রকল্পের বিষয়।

কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবিবিএল-সিএসআর-গ্রাটা সেক্রেটারিয়েটের প্রকল্প সমন্বয়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ। অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.মো. আবুল মনসুর, ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর প্রমুখ।

কর্মশালার শুরুতেই ‘বাংলাদেশে ফল ও সবজির সংরক্ষণ ক্ষতি কমানোর জন্য হিমাগার সমস্যার সমাধান’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক চয়ন কুমার সাহা। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৭২ প্রজাতির ফল এবং ১৫৬ প্রজাতির সবজি উৎপাদিত হয়। সবজি উৎপাদনে দেশের অবস্থান তৃতীয় এবং ফল উৎপাদনে দশম হলেও রপ্তানীতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এতে সংরক্ষণজনিত ক্ষতি হয় প্রায় ২২ থেকে ৪৪ শতাংশ। এ পদ্ধতিতে ফল ও সবজি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ ক্ষতি কমানো যাবে। সংরক্ষিত ফল বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পরে ‘উৎপাদন এবং জলবায়ু অভিযোজন বৃদ্ধির জন্য নাইল তেলাপিয়া (নাইলোটিকা) মাছের একটি উচ্চ-ফলনশীল জাতের বিকাশ’ বিষয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম কাদের খান। এসময় তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তেলাপিয়ার বিশুদ্ধ প্রজাতি নিয়ে এসে আণুবিক্ষনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রজনন ঘটিয়ে অধিক উৎপাদনশীল প্রজাতি তৈরী করা হবে। এতে উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া ‘বাংলাদেশে মুরগির এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দেশীয় স্ট্রেইন নিষ্ক্রিয়করণ করে ভ্যাকসিনের উন্নয়ন’ বিষয়ক নিজস্ব গবেষণার উপর আলোকপাত করেন প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহান আরা বেগম। তিনি বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দেশীয় স্ট্রেইন থেকে তৈরি করা হবে ওই ভ্যাকসিন। গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন হলে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনের আর কোনো অপ্রতুলতা থাকবে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালন আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, প্রথমবারের মতো কৃষি গবেষণায় ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এর মধ্যে ব্র্যাকের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলের অবহেলিত কৃষকদের জন্য ফসলের বীজ, কম্বাইন্ড হারভেস্টর, পাওয়ার টিলার, ট্র্যাক্টরসহ বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে। করোনাকালীন দুইবছর কোনো আমদানী ছিলো না। অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের জন্যই দেশে খাদ্য সংকট তৈরী হয়নি। কৃষিবিদদের অবদানের কথা মাথায় রেখেই কৃষিতে ডাচ-বাংলার এই অর্থায়ন। পাশাপাশি গবেষণা প্রস্তাবনাগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে যে দেশের জন্য এই গবেষণাগুলো খুবই জরুরি।

ভিসি ড.এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের গবেষণার অবস্থান প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে। শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। এই গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানাই।