সমতাধর্মী অর্থনীতি ও সমবায়ী গ্রাম গড়ে তুলতে কৃষি সাংবাদিকতার বিকাশ প্রয়োজন

Category: সমসাময়িক Written by agrilife24

প্রবাসী ডেস্ক:বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক আয়োজিত "সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকট : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ও কৃষি সাংবাদিকতার ভূমিকা" শীর্ষক এক ফেইসবুক ভার্চুয়াল আলোচনা রবিবার (২৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়। কুমিল্লা, ঢাকা, নর্থ আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলোচকবৃন্দ এতে অংশ গ্রহণ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কানাডা প্রবাসী গবেষক, লেখক ও সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্বা দেলোয়ার জাহিদ।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমির ক্ষতি, লবণাক্ততা, খরা, বন্যার মতো সমস্যার মুখোমুখি হওয়া, জলোচ্ছ্বাস, শিলাবৃষ্টি, কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি, ভালো মানের বীজ, সার, এবং সেচের অভাব, টেকসই কৃষি গড়ে তোলায় ব্যর্থতার উপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে নেটওয়ার্কের নির্বাহীবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল, বাংলাদেশ থেকে খায়রুল আহসান মানিক (সহ-সভাপতি), মো. ফিরোজ মিয়া সাধারণ সম্পাদক, এ এস এম শামসুল হাবিব, যুগ্ম সম্পাদক, মো: সাজ্জাদ হোসান, কোষাধ্যক্ষ, এসরার জাহিদ খসরু ও কানাডা থেকে সাইফুর হাসান।

সভাপতি দেলোয়ার জাহিদ বলেন, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন হয়েছে। বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৮৪তম যা আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা "কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড" ও জার্মানির "ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ" যৌথভাবে জিএইচআই-২০২২-এ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ কোনোরকমে ‘মাঝারি ক্ষুধার’ স্তরে এর অবস্থানকে ধরে রেখেছে এর মানে ক্ষুধা সূচকের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আট ধাপ পিছিয়ে গেছে। আশার কথা হলো তালিকায় পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তানের অবস্থান যথাক্রমে ৯৯, ১০৭ ও ১০৯তম সে তুলনায় বাংলাদেশ কিছু ভালো অবস্থানে রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের আসন্ন এ সঙ্কটে উৎপাদন ও বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা, স্বচ্ছতার উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং যৌথ পরিকল্পনা নিশ্চিত এবং খাদ্যব্যবস্থার রূপান্তরে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল নেয়া দরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা, খাদ্যের উৎপাদন হ্রাস, পরিবহণ ব্যবস্থায় বিঘ্নসহ নানা কারণে আগামীতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট আরও তীব্র তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আলোচক নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, দেশে কৃষি ও কৃষকের প্রতি অবহেলা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাওয়া সরবরাহের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। আগামী দিনগুলোতে অবাধ কৃষি তথ্য প্রবাহ বৃদ্ধি সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

খায়রুল আহসান মানিক বলেন, আশির দশক থেকে দেখা যে বেশিরভাগ জিনিসের মতো, জাপানিরা কৃষিতে উচ্চ প্রযুক্তির পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশকে ও বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে কৃষি ব্যবস্থার সংস্কারের সাথে সাথে কৃষি সাংবাদিকতার বিকাশ করতে হবে।

মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, কৃষকদের অবমূল্যায়ন, উৎপাদনের সমস্যা ও কৃষি বাজার এবং তথ্য প্রবাহের উপর নজর দিতে হবে। এ এস এম শামসুল হাবিব বলেন, কৃষিপণ্যের মূল্য বৃদ্বিতে জনজীবন অতিষ্ঠ, কৃষির উন্নয়নে ভালবীজ, পানি নিষ্কাশন ও শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হতে হবে। মো: সাজ্জাদ হোসান বলেন,  কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকট নিয়ে দেশবাসীকে প্রস্তুত করার জন্য যে আগাম বার্তা দিয়েছেন এর আলোকে কাজ করতে হবে। ফসলি জমি রক্ষা, কৃষি তথ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন ও সংবাদপত্রে কৃষি পাতা রাখতে হবে এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোকে সর্বোচ ব্যবহার করতে হবে। এসরার জাহিদ খসরু বলেন কৃষির উন্নয়নের জন্য দেশে আঞ্চলিক চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে তুলতে হবে। সাইফুর হাসান বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করে উন্নত দেশের অনুকরণে তা পরিবর্তনের আহ্বান জানান।  

সভার সভাপতি আরো বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান কর্মকাণ্ড এবং জীবনীশক্তি হলো কৃষি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধত্তোর অবস্থা থেকে প্রতিটি সঙ্কট মোকাবেলায় কৃষি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশে উৎপাদনশীলতা, আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও প্রতিনিয়তই উপলব্ধ হচ্ছে। দেশের বর্তমান জনশক্তির ৫০ ভাগ যেখানে কৃষিতে নিয়োজিত সেখানে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল কৃষিকে সর্ব্বক্ষেত্রে দাবিয়ে রেখেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে বাংলাদেশে সমতাধর্মী সমবায়ী গ্রাম গড়ে তুলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। গ্রামের মানুষকে একত্র করে, সংহত করে এবং সংঘবদ্ধ করে, নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার প্রচেষ্টা ও শুরু করেছিলেন।

তিনি বলে, বাংলাদেশ সহ তৃতীয় বিশ্বের কৃষি সমস্যাগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি সাম্প্রতিক অতীত, বর্তমান এবং অদূর ভবিষ্যতের সমস্যাগুলির মধ্যে ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশে কৃষি সাংবাদিকতার উপর জোর দিতে হবে। সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকটকে সামনে রেখে বাংলাদেশের লক্ষ্য হবে ক্ষুধার মাঝারি স্তর থেকে দেশকে ক্ষুধার নিম্নস্তরে নামিয়ে আনতে সহায়তা করা এবং এ লক্ষ্য অর্জন করতে দেশে কৃষি সাংবাদিকতার বিকাশ করা জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।