প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে এসিআই-এর মত অন্যান্য বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে

Category: ফোকাস Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:প্রাণিসম্পদ খাতের খামারিদের সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করছে। সরকার চায় প্রাণী খাদ্য, মাছের খাদ্য দেশে উৎপাদন হোক। এক্ষেত্রে এসিআই এর মত অন্যান্য বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। এসিআই কৃত্রিম প্রজননের সিমেন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও খামারিদের সরবরাহ করছে। কৃত্রিম প্রজননের সুবিধা নেয়া খামারিদের যেন কষ্ট না হয়, সে বিষয়গুলির দিকে এসিআইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বুধবার (১৫ জুন) গাজীপুরের শ্রীপুরে এসিআই অ্যানিমেল জেনেটিক্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি এসব কথা বলেন। এর আগে এসিআই-এর জেনেটিক্স ল্যাব , ব্রিডিং স্টেশন ও প্রজেনি শো পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।



এ সময় মন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধ করছে । কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষির বিস্তার না হলে দেশ থমকে যাবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। অদূর ভবিষ্যতে দুধেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তাঁর সরকার মনে করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের সাহায্য করতে হবে। তারা স্বাবলম্বী হলে দেশ স্বাবলম্বী হবে।



প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে এসিআই ভূমিকা রাখায় এসিআই পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। এসিআই প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে অবদান রাখায় সরকারের পক্ষে অনেক কাজ করা সহজ হয়েছে বলে জানান তিনি। এসিআই-এর বীজ ব্যবহারে ৬ মাসের মধ্যে গরুর বাচ্চা, মা গাভীতে ও ষাড়ে পরিণত হচ্ছে এটি সত্যিই অনন্দের ও একি সাথে গর্বেরও বটে।  কৃষক-খামারী স্বাবলম্বী না হলে দেশ স্বাবলম্বী হবে না।  মন্ত্রী দেশের স্বার্থে ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে তিনি এসিআইকে সুলভমূল্যে বীজ বিক্রির আহবান জানান। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে এসিআই আরো বেশি ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম, গাজীপুরের কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা ইয়াসমিন, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু, গাজিপুর জেলা ডেইরি এসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম।



স্বাগত বক্তব্যে এসিআই এগ্রিবিজনেসেস-এর প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, মূলত, মাংস ও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খামারির মুখে হাসি ফুটানোই এসিআই-এর মূল লক্ষ। এসিআই এনিম্যাল জেনেটিক্স থেকে কৃত্রিম প্রজননের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রাম বাংলার অসংখ্য বেকার যুবক। এতে করে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । এসিআই সিমেন ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাচ্ছেন খামারিগন এবং তাদের কারিগরী সেবাও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে সংশ্লিস্ট সকলের নিকট।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে বর্তমানে দেশে মাথাপিছু দুধের চাহিদা ২৫০ মিলি যেখানে উৎপাদন হচ্ছে ১৯৩ মিলি.অন্যদিকে মাংস প্রয়োজন ১২০ গ্রাম আর উৎপাদন হয় ১৩৭ গ্রাম। বর্তমান সরকারের প্রাণিসম্পদ মনত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছি এখন প্রয়োজন দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জন। এসিআই এনিমেল জেনেটিক্স সে লক্ষ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে বলেন ড. আনসারী ।



তিনি আরো বলেন, এসিআই এগ্রিবিজনেস দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সরকারের পাশাপাশি কাজ করতে বদ্ধপরিকর। এসিআই এগ্রিবিজনেস এর মিশন হলো- জ্ঞান, দক্ষতা ও টেকনোলজির দায়িত্বশীল প্রয়োগের মাধ্যমে খামারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সরকারের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এ পর্যন্ত তিন হাজার বেকার যুবককে সরকার স্বীকৃত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কৃত্রিম প্রজননের উপর আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। যারা এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে এআই কর্মী হিসেবে কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে।

ড. আনসারী বলেন, এই গবেষণাগার থেকে জেনেটিক মেরিট সম্পন্ন সিমেন তৈরি হচ্ছে, যার ফার্টিলিটি রেট অত্যন্ত ভালো। অচিরেই এসিআই এগ্রিবিজনেস সেক্স সিমেন এবং এমব্রায়ো ট্রাসফারের মতো উন্নত টেকনোলজি প্রয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে  যা প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের গতিকে আরো ত্বরান্তিত করবে।



ড. আনসারী বলেন, ডেইরী সেক্টর উন্নয়নে আমাদের জাত উন্নয়ন, নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত খাবারসহ খামার ব্যবস্থাপনা, বায়ো সিকিউরিটির উপর অনেক কাজ করতে হবে। মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি'র গৃহীত যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপে বাংলাদেশ নিরাপদ প্রাণিজ আমিষে অচিরেই পূর্ণতা পাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন তিনি। "সরকারের পলিসি সাপোর্টের গতি এই ভাবে অব্যাহত থাকলে পোল্ট্রি শিল্পের মতই আমরা প্রাইভেট সেক্টর ডেইরী শিল্পেও অতি অল্প সময়ে অভূতপূর্ব সাফল্য বয়ে আনব"।   



অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যোক্তা ও খামারিগণ, এসিআই এনিমেল হেলথ চিফ টেকনিকাল এডভাইজার ডা. এম এ সালেক ও চিফ অ্যাডভাইজার ডা. হীরেশ রঞ্জন  ভৌমিক, এসিআই এনিমেল জেনেটিক্সের বিশেষজ্ঞ ডা. অরবিন্দ কুমার সাহা, এসিআই সীড-এর বিজনেস ডিরেক্টর সুধীর চন্দ্র নাথ, এসিআই এনিমেল হেলথ-এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ শাহিনশাহ, এনিমেল জেনেটিক্সের বিজনেস ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন আহমেদ, সহ এনিমেল জেনেটিক্স এবং এনিমেল হেলথ-এর কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



দেশের ডেইরি শিল্পে সংশ্লিষ্ট খামারি,বিশেষজ্ঞ এবং শিল্পের সাথে ব্যবসায়ী সকলেই মনে করেন এসিআই এনিম্যাল জেনেটিক্স প্রান্তিক পর্যায়ে গাভী পালনকারীদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে ব্যাপক গুরুত্ব রাখছে। প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যা অত্যন্ত জরুরি মনে করেন সুধীজনেরা। সকলেই এসিআই এনিম্যাল জেনেটিক্স-এর সকল উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং এর সফলতা কামনা করেন।