উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ইলিশ মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনা সরকারের লক্ষ্য-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

Category: ফোকাস Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ইলিশ দেশের সব মানুষের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা সরকারের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

বুধবার (৩০ মার্চ) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ কথা জানান।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, "মৎস্যজীবী, ইলিশ ব্যবসায়ী, আড়তদার, ভোক্তাসহ সকল শ্রেণির জনগণের মাঝে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বছরও ৩১ মার্চ হতে ০৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ২০২২ উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। এবছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে 'ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, জাটকা ধরলে সর্বনাশ'। এবছর দেশের ইলিশ সম্পৃক্ত ২০টি জেলায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ২০২২ এর কাযর্ক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে"।

তিনি আরো বলেন, "বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ ও বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার একটি রাষ্ট্রে পরিণত করার যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তারঅন্যতম হিসেবে তিনি মৎস্য খাতকে সমৃদ্ধ ও বিকশিত করতে চেয়েছিলেন। এ খাতকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেছিলেন মাছ হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় প্রধান গুরুত্বপূর্ণ খাত। এজন্য সমুদ্র সীমা আইন প্রণয়ন, বিদেশ থেকে মাছ আহরণে ট্রলার আনাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় দেশের মৎস্য খাত একটি বিকশিত স্থানে পৌঁছেছে"।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হাফছা বেগমসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, "জনসাধারণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইলিশ মাছের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশী আহরিত হয় এদেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। এ কারণে বাংলাদেশের ইলিশ দেশের জি আই পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে। দেশের প্রায় ৬ লক্ষ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০-২৫ লক্ষ লোক ইলিশ পরিবহণ, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরী, বরফ উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজে জড়িত। ইলিশের সাথে দেশের বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ত"।

ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, "জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করা, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনা করে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় ২২ দিন করা, ইলিশ সম্পৃক্ত নদ-নদী, অববাহিকায় ৬টি অভয়াশ্রম স্থাপন ও নির্ধারিত সময়ে অভয়াশ্রম মাছ আহরণ বন্ধ রাখা, মাছ ধরা নিষিদ্ধকালে মৎস্যজীবীদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান ও তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ, জেলে ও মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময় নভেম্বর হতে জুন পর্যন্ত ৮ মাস করা, জাটকার দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লক্ষ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। এসবই সম্ভব হয়েছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, মৎস্যজীবীদের সহায়তা এবং সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে"।

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রতিকূলতা কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জালসহ অন্যান্য অবৈধ জাল দিয়ে নির্বিচারে জাটকা নিধন উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো বলেন, "মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলে ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ১৭টি জেলায় বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সহায়তায় ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন-২০২২’ পরিচালনা করা হয়েছে।  এ সময় ৩০ দিনে মোট ৮৮৪ টি মোবাইল কোর্ট ও ৩৫৪৬ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে"।

তিনি আরো বলেন, "বর্তমান সরকার জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জাটকা আহরণে বিরত ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯৯৬ টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসে ৫৬ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন ভিজিএফ বিতরণ করা হয়েছে যা বিগত বছর হতে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এবছর ১ম ধাপে মার্চ-এপ্রিল মাসের জন্য ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৭০০টি জেলে পরিবারের জন্য ৪০ কেজি হারে মোট ৩১ হাজার ২৫৬ মে.টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি"।

মন্ত্রী আরো যোগ করেন, "ইলিশের পর্যাপ্ত উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের সবাই যখন ইলিশের স্বাদ নিতে পারবে, তারপর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইলিশ রপ্তানির চিন্তা-ভাবনা আমাদের রয়েছে। দেশের ইলিশ সম্পদ তথা মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে"।

উল্লেখ্য, দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে ইলিশ তথা মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে অবৈধ জাল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক ও জাটকা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন হয়ে আসছে।