নীলফামারীতে চাল বাজারজাতকরণে নতুন উদ্যোগ

Category: ফোকাস Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:‘দেশে প্রায় দুই শতাধিক জাতের ধান আবাদ হলেও বাজারে ৮-১০টির বেশি জাতের চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন ভোক্তা সাধারণ প্রতারিত হচ্ছে। আবার অন্যদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্ভাবিত স্বনামে পছন্দ মতো চাল কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। এ সমস্যা উত্তোরণে নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী দোগছি গ্রামে ১৫ জন কৃষকের দল গঠন করে ব্লক আকারে ব্রি ধান৮৭ জাত চাষ করে সামছুল হক অটো রাইছ মিল ও ইউএসএআইডি অর্থায়নে সিসা (Cereal Systems Initiative for the South Asia) প্রকল্পের সহযোগিতায় বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী দোগছি গ্রামে সামছুল হক অটো রাইছ মিলের আয়োজনে ব্রি ধান৮৭ জাতের ধান কর্তন ও ব্রান্ডিং উপলক্ষে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে কৃষি বিশেষজ্ঞগণ এসব কথা বলেন।

মাঠ দিবসের আলোচনা পর্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) নীলফামারী জেলার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু বক্কর সিদ্দিক এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. শহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম, অভিজাত গ্গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সামছুল হক অটো রাইছ মিলের সত্বাধিকারী জনাব মো. সামছুল হক, ব্রি রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান, নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. কামরুল হাসান প্রমুখ।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ব্রি ধান৮৭ আমনের আগাম ও স্বল্পজীবনকাল বিশিষ্ট জাত হওয়ায় সারা দেশে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে আগাম আলু, সরিষা, ভুট্টা, গমসহ অন্যান্য রবি শস্য চাষে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিবে। এছাড়া তিনি বলেন স্থানীয় স্বর্ণা জাতের তুলনায় ফলন হেক্টর প্রতি ১টন বেশি এবং চাল লম্বা ও সরু হওয়ায় বাজার মূল্যও বেশি পাওয়া যাবে।

সূচনা বক্তব্যে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা বিশেষজ্ঞ মো. আবু আব্দুল্লাহ মিয়াজী বলেন, দেশে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হলেও বাজারে ৮-১০টির বেশি চাল বাজারে পাওয়া যায় না। এ সমস্যা সমাধানে সিসা প্রকল্পের আওতায় ভোক্তা পর্যায়ে স্বনামে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চাল পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অটো রাইছ মিলারদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ব্রান্ডিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

কৃষক প্রতিনিধি রতন মিয়া বলেন, মাত্র ১২৭ দিনে এ জাতের ধান চাষ করে বিঘা (৩৩ শতক) প্রতি ১৮ মণ ফলন পেয়েছি। চাল লম্বা ও সরু হওয়ায় বাজার মূল্যও বেশি পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সামছুল হক অটো রাইছ মিলের সত্বাধিকারী মো. সামছুল হক ধানের জাতের প্রকৃত নামে চাল বাজারজাতকরণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

তিনি জানান অভিজাত গ্রুপের কৃষি উৎপাদিত পণ্যসহ অন্যান্য ভোক্তা আইটেম বিশ্বের ৩৫ দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের যৌথভাবে সম্পৃক্ত করে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে একই সাথে ভোক্তা সাধারণ উপকৃত হবে বলে তিনি আরও জানান।

সিসা-সিমিট দিনাজপুর হাবের সমন্বয়কারী এলানুজ্জামান মনে করেন অদূর ভবিষ্যতে সারাদেশে এ ধরণের উদ্যোগ সম্প্রসারিত হবে। ডিএই নীলফামারী জেলার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, নীলফামারী জেলায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমিতে আগাম আলুর চাষ হয়ে থাকে। ব্রি ধান৮৭ জাতটি আগাম ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় দ্রুত সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঢাকা খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম বলেন, বর্তমান সরকার খোরপোশের কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্বনামে সুগন্ধি ও সরু চাল ব্রান্ডিংয়ের এ উদ্যোগ বিশ্ব বাজারে চাল রফতানি বাণিজ্যকে আরও ত্বরাণি¦ত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এর আগে আমন্ত্রিত অতিথিসহ উপস্থিত কৃষকগণ ব্রি ধান৮৭ এর মাঠ পরিদর্শন করেন। মাঠ দিবসে প্রায় দুই শতাধিক কৃষক-কিষাণী উপস্থিত ছিলেন।