সয়াবিন রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা

Category: ফোকাস Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:বহির্বিশ্বে সয়াবিন রপ্তানি কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে এক অফিস আদেশ জারি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ডিএই-এর উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং-এর পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত (স্মারক নং-১২.০১.০০০০.৫০০.৯৯.১১৬.১১৭/৪৬৪৮)- এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ নির্দেশনাটি জারি করা হয়।

উক্ত অফিস আদেশে বিগত ১ সেপ্টেম্বর (স্মারক নং-৩৩.০১.০০০০.১১০.০৪.০০১.২১-১৭০০) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত একটি পত্রের আলোকে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ সেক্টরে ডেইরি ও পোল্ট্রি ফিডে সয়াবিন একটি অন্যতম উপাদান। বিগত ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাকালীন বিশ্ববাজারে সয়াবিন আমদানি-রপ্তানি মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। ফলে দেশীয় বাজারে বাৎসরিক সয়াবিনের প্রাপ্যতার ঘাটতি দেখা দেয়।

দেশের ক্রমবর্ধমান ডেইরি ও পোল্ট্রি ফিডের চাহিদা মেটাতে বছরে প্রায় আনুমানিক ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন সয়াবিন মিলের প্রয়োজন হয় যার সিংহভাগই বিদেশ নির্ভর। কাজেই রপ্তানি করা হলে ডেইরি ও পোল্ট্রি ফিড উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে যার ফলশ্রুতিতে পশু/পোল্ট্রি খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি হতে পারে বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়। এমতাবস্থায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বহির্বিশ্বে সয়াবিন মিল রপ্তানি কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার জন্য উক্ত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়।

সম্প্রতি একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে ভারতে সয়াবিন মিলের রপ্তানীতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব ডা. শেখ আজিজুর রহমান। দেশের খামারগুলো যেখানে ন্যায্যমূল্যে ফিড পাচ্ছে না, পোল্ট্রির খাবারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন অবস্থায় সয়াবিন মিল রপ্তানি করাকে তিনি একরকম আত্মঘাতী হিসেবেই মনে করেন।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক জনাব আহসানুজ্জামান বলেন, সয়াবিন মিলের এই অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধিতে অনেক ফিডমিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে এবং অনেক মিলারগণ তাদের উৎপাদন অর্ধেকে নামাতে বাধ্য হবেন। দেশে বর্তমানে সয়াবিন মিলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৮-২০ লক্ষ টন। সরবরাহের ঘাটতি থাকায় বছর জুড়েই উত্তপ্ত দেশের সয়াবিন মিলের বাজার। সয়াবিন মিলের এ সংকট প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন ব্যাহত করবে, ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। তিনি বলেন, মৎস্য ও প্রানীজ খাদ্যের প্রধান এই উপাদানটিকে ঘিরে সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে সম্প্রতি ভারতে রপ্তানি নিয়ে।

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বিগত এক মাসে সয়াবিন মিলের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৮-১০ টাকা, বছর ব্যবধানে দাম বেড়েছে  ২৫-৩০ টাকা। পাইকারি বাজারে হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ সয়াবিন মিল বিক্রয় হচ্ছে ৫৫-৫৭ টাকা এক মাস আগেও যা ছিল ৪৪-৪৬ টাকা। সয়াবিন মিলের অস্থিরতার প্রভাবে দাম বেড়েছে পোল্ট্রি, মৎস্য ও ক্যাটল ফিডের। আগের চেয়েও দ্বিগুণ দামে ক্রয় করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন খামারীরা।

বিশ্লেষকবৃন্দ মনে করেন, সয়াবিন মিলের মূল্য কমানো না গেলে ডিম, পোল্ট্রি এবং মাছের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং ঝুঁকিতে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। দেশ ও দশের স্বার্থে এই সয়াবিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা সয়াবিন মিলের বর্তমান অস্থিরতা কমাতে কিছুটা সহায়ক হবে বলে মনে করছেন এ সেক্টরের সুধীজনরা।