
বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উদ্যোগে মাঠ পর্যায়ে গাজর ও টমেটো উৎপাদন বিষয়ে কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ আয়োজন এবং বীজ ও চারা বিতরণ করা হয়েছে। এসময় কৃষকদের মাঝে তিন হাজার টমেটোর চারা এবং কৃষক প্রতি দুই শতাংশ জমিতে বপনযোগ্য ৫০ গ্রাম করে গাজরের বীজ প্রদান করা হয়।
আজ শনিবার (০৮ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চর নিলক্ষীয়ায় প্রায় ৪০ জন কৃষকের অংশগ্রহণে ওই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
"খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিকূল পরিবেশে সহনশীল পুষ্টিসমৃদ্ধ রঙিন গাজর ও টমেটোর উদ্ভাবন ও বিস্তার" শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেন্টারের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমানের সভাপতিত্ব করেছেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির মহাসচিব অধ্যাপক এ. এস. এম. গোলাম হাফিজ কেনেডি, কৃষি অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রকল্পের কো-পি আই অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী, বাকৃবির আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রোস্তম আলী, গাজর ও টমেটো গবেষণার প্রকল্প পরিচালক ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ এবং অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষকদের পাশে থেকে চরাঞ্চলে উচ্চমূল্যের ও পুষ্টিকর ফসল চাষে উৎসাহ দিচ্ছে। টমেটো ও গাজরের মতো ফসল চাষে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীরা কৃষি সমস্যা সমাধান ও প্রযুক্তি সহায়তায় কাজ করছেন। প্রকল্পটি কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে অবদান রাখবে।
অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান বলেন, এখন বাজারে সব সবজির দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। গাজরের দাম এখন ১০০ টাকার উপরে। টমাটোরও দাম বেশী। কারণ এগুলোর চাহিদা অনেক। তাই গাজর টমাটো চাষ হবে কৃষকদের জন্য অধীক লাভজনক। কৃষকরা কিন্তু এখন শিক্ষিত, এবং এখন তারা বুঝে ভালো বীজের গুরুত্ব। এবছর অমরা বীজ দিয়ে গেলাম সামনের বছর আপনারাই বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তী বছর আপনি নিজে লাভবান হবেন। তাহলে আমাদের এই কষ্টটা আপনার এই কষ্টটা, কৃষকের কাছে পৌঁছে দিবে, আমাদের কষ্ট হবে না। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে।
অধ্যাপক এ. এস. এম. গোলাম হাফিজ কেনেডি বলেন, গাজর জনপ্রিয় সবজি। এটার অনেক রোগ প্রতিরোধ গুণাবলী আছে। এর বাজার মূল্য কিন্তু অনেক বেশি। যদি সঠিকভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পোকা মাকড় দমন করে ফসল করেন তাহলে বেশি লাভবান হবেন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে গাজর রপ্তানি করা সম্ভব হবে। বেশি সার দিলেই উৎপাদন বাড়বে, এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সিজনে চাষ করেলে এর বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। সেই কারণেই সবজি এবং বীজ এবং সার বিতরণ কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, "আমরা আগে ভাবতাম রঙিন গাজর বা উন্নত টমেটো চাষ করা কঠিন হবে। কিন্তু আজকের প্রশিক্ষণে বুঝলাম সঠিক বীজ, পরিচর্যা আর সময়মতো সার দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। এখন আশা করছি আগামী মৌসুমেই এই জাতগুলো চাষ শুরু করব।"
আরেক কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, "বাকৃবির গবেষকরা আমাদের দেখিয়েছেন কীভাবে কম খরচে বেশি উৎপাদন করা যায়। আগের মতো আন্দাজে চাষ না করে এখন বৈজ্ঞানিকভাবে করতে পারব। গাজর আর টমেটোর এই নতুন জাতগুলো বাজারে ভালো দাম দেবে বলেও আশা করছি।"