সমীরণ বিশ্বাস: ডা.চাষী, বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল AI কৃষি প্ল্যাটফর্ম। কৃষক, উদ্যানপালক এবং কৃষি-ব্যবসায়ীদের ফসলের স্বাস্থ্য অনুকূলকরণ, ফলন বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব উন্নীত করার জন্য AI-চালিত প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করে। ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে উন্নত প্রযুক্তি একীভূত করে, আমরা জাতীয় এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু লক্ষ্যগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করি। বাংলাদেশের কৃষি আজ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ফসলের রোগবালাই, পোকামাকড়ের আক্রমণ, অনিশ্চিত বাজার ব্যবস্থা এবং আর্থিক অনিশ্চয়তা কৃষকের জীবনকে প্রতিনিয়ত কঠিন করে তুলছে। এই প্রেক্ষাপটে, কৃষকের জন্য একটি আধুনিক ও কার্যকর সমাধান হিসেবে এসেছে “ডা.চাষী”, যা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্মার্ট ও ডিজিটাল সিস্টেম। ডা.চাষী সিস্টেমের মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষিকে আরও টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে তোলা। এটি কৃষকের জীবনযাত্রায় সরাসরি ইতিবাচক পরিবর্তন আনে এবং কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নত করতে সহায়তা করে। বর্তমানে এক লক্ষ কৃষক পরিবার এই সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, যা এর গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতার স্পষ্ট প্রমাণ।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষকের সহায়তা:
ডা.চাষী সিস্টেমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে সহজেই ফসলের রোগ ও পোকামাকড় শনাক্ত করা সম্ভব। শুধু শনাক্তকরণই নয়, কৃষককে তাৎক্ষণিকভাবে উপযুক্ত সমাধানও প্রদান করা হয়। পাশাপাশি আগাম সতর্কবার্তা এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষককে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। এতে কৃষক অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে এবং ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এছাড়া, ডিজিটালি সারের সুপারিশ বা “fertilizer recommendation” কৃষককে সঠিক পরিমাণ ও সময়ে সার প্রয়োগে সাহায্য করে। এর ফলে জমির উর্বরতা বজায় থাকে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং অযথা অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, তা অনেকাংশে কমে যায়। এই প্ল্যাটফর্মের ই-কমার্স ব্যবহার করে কৃষকরা অতি সহজেই তার কৃষি পণ্য ক্রয় করতে পারেন।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন:
ডা.চাষী শুধু প্রযুক্তিগত সেবা নয়, বরং কৃষকের আর্থিক স্থিতিশীলতাতেও সহায়তা করে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে কৃষক লোন ও সঞ্চয়ের সুযোগ পায়, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা জোরদার করে। পাশাপাশি ফসল সুরক্ষা বীমার সুবিধা কৃষককে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা হঠাৎ ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। এর ফলে কৃষকের আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং সামাজিকভাবে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
কৃষকের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা:
অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার কৃষকের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। ডা. চাষী সিস্টেম কৃষককে বিজ্ঞানসম্মত ও সঠিক পরামর্শ প্রদান করে, যাতে তারা অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক ব্যবহার না করে। এর মাধ্যমে কৃষকের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হয় এবং পরিবেশ দূষণও হ্রাস পায়। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে জনগণও উপকৃত হয়।
SDG-তে অবদান:
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG)-এর অন্তত ৯টি বিষয়ে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে ডা.চাষী। এর মধ্যে রয়েছে; ক্ষুধামুক্তি ও নিরাপদ খাদ্য , সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, শিক্ষা ও সচেতনতা ,সমতা ও অন্তর্ভুক্তি, আর্থিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাস, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা । অতএব, ডা.চাষী শুধু কৃষি খাতকেই নয়, বরং সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিচ্ছে।
ডা.চাষীর সফলতা ও অংশীদারিত্ব:
কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন এবং সম্প্রসারণে ডা.চাষী বাংলাদেশের প্রথম উদ্যোগ। ইতিমধ্যে এ প্রযুক্তি দেশ ও বিদেশে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি ও একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে। ডা.চাষী বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের মাধ্যমে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি, এর কার্যকারিতা ও নির্ভরযোগ্যতা (Validation) নিশ্চিত করার জন্য স্বনামধন্য জাতীয় কনসালটেন্ট প্যানেল এবং কৃষি নার্স ইনস্টিটিউট সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। ডা.চাষী কৃষিতে AI প্রযুক্তিভিত্তিক এই সিস্টেমটির উদ্ভাবক ও আবিষ্কারক মদিনা আলী। তিনি ঢাকাভিত্তিক জিনিয়াস ফার্মস লিমিটেড-এর ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ডা.চাষী একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ, যা কৃষিকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে। এটি একদিকে যেমন কৃষকের সময়, টাকা ও ফসল বাঁচায়, অন্যদিকে কৃষকের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায়ও কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা, কৃষকের আর্থিক স্থিতিশীলতা গড়ে তোলা এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখছে এই স্মার্ট সিস্টেম। ভবিষ্যতে আরও বেশি কৃষক পরিবার এই সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হলে বাংলাদেশ কৃষি খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম হবে।
লেখক: কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।