বাকৃবিতে গবেষণা-সার ব্যবহারের তথ্য জানাবে মোবাইল অ্যাপ

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি: একটি জমিতে কি পরিমাণ সার প্রয়োজন তা নির্ণয়ের জন্যে “নিউট্রিয়েন্ট ব্যালেন্স” নামে একটি মোবাইল অ্যাপ উদ্ভাবন করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। তাঁদের উদ্ভাবিত এই অ্যাপটির মাধ্যমে আলু, বোরো ধান, রোপা আউশ ধান, রোপা আমন এবং ভূট্টা এই পাঁচটি ফসলের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ সার কম বা বেশি আছে সেটি জানতে পারবেন কৃষক।

“ডেভেলপমেন্ট অফ এ ফিল্ড লেভেল স্কেল নিউট্রিয়েন্ট ব্যালেন্স ক্যালকুলেটর ফর ক্রপস অফ অ্যান ইনটেনসিভলি ম্যানেজড এগ্রিকালচারাল সিস্টেম” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অ্যাপটি উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর। এটি তৈরিতে সহকারী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দীন। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন তারা।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট তিন বছরের ওই গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি (বিএএস) এবং ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)। অ্যাপটির অধিকতর উন্নয়ন করে কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণের লক্ষে প্রকল্পটি আরও এক বছরের জন্যে বর্ধিতও করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আর্কাইভস অব এগ্রোনমি এন্ড সয়েল সায়েন্স নামক আন্তর্জাতিক জার্নালে এই অ্যাপের গবেষণা সম্বলিত দুইটি প্রকাশনা প্রকাশিত হয়েছে এবং জার্নাল অব ইন্ট্রিগেটিভ এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্সে একটি প্রকাশনা গৃহীত হয়েছে।

উদ্ভাবিত মোবাইল অ্যাপটির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রধান গবেষক বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের অ্যাপটি বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই ব্যবহার করা যাবে। পরে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন নির্বাচন করে কোন ফসলের জন্যে কোন সার কতোটুকু লাগবে সেটির মোট পরিমাণ করার জন্যে বৃষ্টিপাত, মাটির গুণাগুন ও কাঙ্খিত ফলনের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করা হবে কি না এবং ফসলের কি পরিমাণ অবশিষ্টাংশ জমিতে থাকে এসব তথ্যও অ্যাপে দিতে হবে। এরপরেই কৃষকের দেওয়া সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে যতটুকু সার দেওয়া হয়েছে তার একটি ব্যালেন্স মান দিবে অ্যাপ। ব্যালেন্সের মান ঋণাত্মক আসলে বুঝতে হবে ওই পরিমাণ অতিরিক্ত সার জমিতে দিতে হবে। আর যদি ধণাত্মক মান আসে তাহলে ওই পরিমাণ সার অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ওই পরিমাণ সার কম প্রয়োগ করতে হবে। এতে যেমন খরচ কমবে পাশাপাশি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।

অ্যাপটির তৈরির সহকারী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দীন বলেন, এ পর্যন্ত দেশের তিনটি স্থানে (বগুড়ার শেরপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা) এই অ্যাপ দিয়ে প্রাথমিক গবেষণা করা হয়েছে। তিনটি স্থানেই আশানুরূপ ফলাফল দিয়েছে অ্যাপটি। অ্যাপটির এখনো উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এটি সম্পূর্ণ কৃষকবান্ধব করে কৃষক পর্যায়ে প্রচারণা করা হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো দেশের সবগুলো জেলার কৃষকদের কাছে এই অ্যাপটি পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের তৈরি এই অ্যাপটি স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট কৃষক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশ কৃষি বিম্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, দেশের কৃষক ও খামারীদের জন্য এই অ্যাপটি খুবই সহায়ক হবে। একটি এলাকার মাটি, জলবায়ু, বৃষ্টিপাতসহ বিভিন্ন তথ্য যখন অ্যাপটিতে যুক্ত করা হবে অ্যাপটি জানিয়ে দিবে ওই জমিতে কোন ফসলে জন্য কতটুকু সার লাগবে। এছাড়া কতটুকু সার গাছ নিজে ব্যবহার করবে, পানিতে অপচয় হবে, বায়ু দূষণে অপচয় হবে সে তথ্যটাও জানিয়ে দিবে। এছাড়া গ্রীন হাউজ গ্যাস হিসেবে কতোটুকু নিঃসরণ হবে সেটিও জানার সুযোগ থাকলে। দেশের কৃষিকে স্মাট কৃষিতে রূপান্তর করতে এই অ্যাপটি বিশেষভাবে সাহায্য করবে।