কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

Category: ইসলাম ও জীবন Written by agrilife24

ইসলামিক ডেস্ক:কুরবানীর ঈদের আর প্রায় একমাসের কম সময় হাতে রয়েছে। জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে পবিত্র ঈদ উল আজহা বা কুরবানির ঈদ।যাদের কুরবানি করার সামর্থ্য আছে আমরা যেন কেউ এর ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হই। সাধ্য মত উত্তম পশু কুরবানির জন্য, প্রয়োজনে এখন থেকেই কিছু টাকা আলাদা করে রাখার চেষ্টা করি। কুরবানির সামর্থ্য থাকা অবস্থায়ও যারা কুরবানি দিতে কার্পণ্য করেন তাদের ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠিন ধমকি এসেছে।

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন-অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। যেমন কারো নিকট কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁদির মূল্য সমান হয় তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব। সোনা-রুপার বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এখন নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলে অর্থাৎ তাদের কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের উপর ভিন্ন ভিন্ন কুরবানী ওয়াজিব।

পরিবারের যত সদস্যের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের প্রত্যেককেই একটি করে পশু কুরবানী করতে হবে কিংবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ দিতে হবে। একটি কুরবানী সকলের জন্য যথেষ্ট হবে না। স্বামী স্ত্রী যদি আলাদা আলাদা ভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হন তাহলে উভয়ের উপর আলাদা আলাদা কুরবানী ওয়াজিব হবে।

নেসাবের মেয়াদ: কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিন থাকলে এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের কিছু আগে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলেও কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

নাবালেগের কুরবানী
নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে নফল কুরবানী করতে পারবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

মুসাফিরের জন্য কুরবানী
যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫

দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম
নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই এমন দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২

আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রতি বছর কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।