দুধের উৎপাদন এক অসামান্য প্রক্রিয়া ও এর মাঝে আমাদের স্রষ্টার রয়েছে এক মহা নিদর্শন

Category: ইসলাম ও জীবন Written by agrilife24

ইসলামিক ডেস্ক:❝গবাদিপশুর মধ্যেও তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। আমি (আল্লাহ) তাদের পেটের ভিতরের গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে খাঁটি দুধ (বের করে) তোমাদেরকে পান করাই, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক।❞ [সূরাঃ আন্-নাহল, আয়াতঃ ৬৬]। এখানে আয়াতে এটা বলা হচ্ছে না যে গোবর থেকে দুধ বের হয়। বরং দেহাভ্যন্তরের এক বিশেষ প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যার মাধ্যমে খাদ্যসার থেকে গোবর আলাদা হয় ও দুধ পাওয়া যায়।আর এর বাহক হচ্ছে রক্ত। একারণেই আয়াতে বলা হয়েছেঃ  “তার পেটের গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ...”

গ্রন্থিময় দেহকলা বিন্যস্ত স্তন থেকে দুধ উৎপাদিত হয়। স্তনের তন্তুময় দেহকলা লতিগুলোকে মেদময় দেহক্লার সাথে সংযুক্ত করে। স্তুনের গ্রন্থিময় অংশটি (বাঁট) অনেক লতি দিয়ে গঠিত। এগুলোতে রয়েছে বহু লতিকার সমাবেশ যেগুলো আন্তরকলা, রক্তবাহী নালী সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি লতিকায় রয়েছে গোলাকার একগুচ্ছ বায়ুস্থলী যা দুগ্ধোৎপাদক নালীগুলোর ক্ষুদ্রতম শাখার দিকে উন্মুক্ত। এই দুগ্ধোৎপাদী শাখাগুলো একত্রিত হয়ে একেকটি দুগ্ধোৎপাদক নালী হিসাবে গঠিত হয় যা গ্রন্থির একটি লতি দিয়ে বেরিয়ে আসে। আর এইসব নালী দিয়ে দুধ বাঁটে পৌঁছে।

গবাদি পশুসহ সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর ম্যামারি গ্ল্যান্ড বা স্তনগ্রন্থী দুধ উৎপাদনে সক্ষম। এই দুধ বায়ুস্থলী কোষ থেকে নিঃসরিত হয়। আর এই গ্রন্থিগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি আসে রক্ত থেকে। রক্তপ্রবাহ আসে বক্ষ,অন্তর্বক্ষ পঞ্জরাস্থী অঞ্চলের ধমনী থেকে। দুধের উপাদানগুলো স্তনে প্রবাহিত রক্ত থেকে পাওয়া যায়। এভাবে গবাদি পশুর দুধে রয়েছে তাদের খাদ্য – ঘাস, খড় বিচালী থেকে প্রাপ্ত উপাদানসমূহের সমাবেশ। খাদ্য গ্রহণ ও তা পরিপাকের পর খাদ্যের অব্যবহৃত অংশ বর্জ্য বা মল-মূত্র (গোবর-চোনা) হিসেবে বেরিয়ে যায়। খাদ্য থেকে বিশোষিত উপাদানগুলো রক্তে প্রবেশ করে শেষ অবধি হৃদপিণ্ডে পৌঁছে। বাম নিলয় থেকে রক্ত অক্সিজেন দ্বারা পরিশুদ্ধ বা মিশ্রিত হয়ে বিশোষিত পুষ্টি উপাদানসহ দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত হয়। এভাবে পুষ্টি উপাদানগুলো স্তনগ্রন্থিতে পৌঁছে যায়। সেখানে বায়ুস্থলী কোষগুলো দুধ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো রেখে যায়। রক্ত প্রবাহিত হয় শিরাপ্রণালীতে ও এমনি করে তা আবার হৃদপিণ্ডে ফিরে আসে। গোটা চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে কুরআনে যেভাবে বর্ণিত আছে সেভাবে বর্জ্য (গোবর) ও রক্তের মধ্য থেকে দুধ তৈরি হয়ে থাকে। এই দুধ এক বিস্ময়কর বস্তু। যে কোন প্রাণীর দুধই হোক না কেন, তা মানবশিশু থেকে শুরু করে পশুর শাবক প্রত্যেকের নিজ নিজ প্রয়োজন যথার্থভাবে মেটানোর জন্য নিখুঁতভাবে তৈরি। আল্লাহর সৃষ্ট এক অসামান্য প্রক্রিয়ায় এটি তৈরি হয়।

দুধ উৎপাদন এক বিস্ময়কর রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ধারাপ্রবাহ মানুষের এ পর্যন্ত জানা সব থেকে জটিল দৈহিক রাসায়নিক প্রক্রিয়ার একটি। হিসাব করে দেখা গেছে যে, এক আউন্স দুধ তৈরির জন্য প্রায় ৪০০ আউন্স রক্ত স্তনে প্রবাহিত হবার প্রয়োজন পড়ে। অথচ রক্তের উপাদানগুলো দুধের উপাদানের তুলনায় একেবারেই আলাদা অর্থাৎ রক্তের এমিনো এসিড দুধের জটিল প্রোটিন বিন্যাস থেকে একেবারেই ভিন্ন। রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করা দুধের শর্করা তথা ল্যাকটোজ থেকে অনেকখানি ভিন্ন প্রকৃতির। আর রক্তের স্নেহাম্ল বা ফ্যাটি এসিড দুধের স্নেহপদার্থ থেকে একেবারেই ভিন্ন।

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে দুধের উৎপাদন এক অসামান্য প্রক্রিয়া এবং এর মাঝে আমাদের স্রষ্টার এক মহা নিদর্শন আছে। কাজেই আল্লাহ যথার্থরূপেই কুরআনে এর উল্লেখ করেছেন যাতে মানবজাতি তাঁর নিদর্শন সম্পর্কে সচেতন হয়।
তথ্যসূত্রঃ
[1]  আল কুরআন, নাহল ১৬:৬৬

[2]  J.D. Katcliffe. Reader’s Digest Book of the Human Body, The Reader’s Digest Association Ltd. London, 1964, page 367

সহায়ক গ্রন্থঃ 'আল-কুরআনে বিজ্ঞান' (Scientific Indications in the Holy Quran এর অনুবাদ)

অনুবাদে : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ অনুবাদ পরিষদ, সম্পাদনা : অধ্যাপক এ. এফ. এম. আবদুর রহমান।