রিজিক মানে শুধু খাদ্য সামগ্রী নয়, বরং জীবন-উপকরণের সবকিছু

ইসলামিক ডেস্ক: আল্লাহ তায়ালা জীবন-উপকরণ দান করেন। মানুষ নিতেও পারে না দিতেও পারে না, মাধ্যম হতে পারে মাত্র। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, যত প্রাণী আছে, সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপরে। (সুরা হুদ: আয়াত ৬)। রিজিক মানে শুধু খাদ্য সামগ্রী নয়, বরং জীবন-উপকরণের সবকিছু। অর্থাৎ সব প্রাণীর জীবন-উপকরণের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি দয়ালু, যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন, তিনি প্রবল পরাক্রমশালী। ( সুরা শুরা: আয়াত ১৯)

রিজিক এমন জিনিস, যা মহান আল্লাহ প্রাণিকুলের নিকট নিয়ে যান এবং প্রাণীরা তা আহার করে। এ রিজিক অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়, যেমন- স্বাস্থ্য, সম্পদ, খাদ্য, বুদ্ধি, উপায়-উপকরণ, সময় ইত্যাদি। এমনকি আমাদের জীবনটাও রিজিক। এই সবকিছু আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে আল্লাহ হলেন আর-রাজ্জাক তথা রিজিকদাতা। এখন প্রশ্ন হলো আমরা যদি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে আমাদের সামনে রিজিক আসবে না চেষ্টা করতে হবে? অবশ্যই খাবারের সন্ধানে চেষ্টা করতে হবে। শুধু তাই নয়, এ রিজিক বৃদ্ধি জন্য আমল করা, সর্বোপরি মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা একান্ত কর্তব্য।

মহান আল্লাহ রিজিক অন্বেষণের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন : তারপর যখন নামায শেষ হয়ে যায় তখন ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা আল-জুমুআ, ১০)

মহান আল্লাহ আরো বলেন, তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার সহকারে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এবং তোমাদের জন্য এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করেছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর গুজারি করে থাকো। (সূরা আল আরাফ : ১০)

 রিজিক বৃদ্ধির জন্য আমাদের কবশেষ কিছু আমল করা প্রয়োজন তা হচ্ছে :

  • মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও খোদাভীতি অবলম্বন করা
  • কৃতকর্মের জন্য তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা
  • আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা করা
  • আল্লাহর ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করা
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা
  • আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা
  • আল্লাহর পথে হিজরত করার মাধ্যমে রিজিক বেড়ে যায়
  • দুর্বল ও অসহায় মানুষের প্রতি মমতা দেখানো
  • দ্বীনি ইলম অন্বেষণে আত্মনিয়োগকারীর জন্য ব্যয় করা
  • হজ ও উমরাহর পারস্পরিকতা তথা হজ ও উমরাহ পরপর আদায় করা।

অন্যদিকে রিযিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকভাবে পরিত্যাজ্য কিছু বিষয় রয়েছে। সেগুলো পরিত্যাগ করতে না পারলে রিজিক হারাম হয়ে যাবে। যেমন :

  • কোন রিজিক বা উপার্জন সামান্যতম হারামের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও তা পরিত্যাগ করতে হবে
  • ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য পরিধেয় বস্ত্রসহ সবকিছু হালাল উপার্জনের দ্বারা হতে হবে অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য হবে না
  • মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে সম্পদ বা রিজিক অর্জন না করা
  • সুদের সাথে কোন অবস্থাতেই সম্পৃক্ততা না থাকা
  • জুলুম করে সম্পদ অর্জন একেবারে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে
  • অপচয় ও অপব্যয় না করা
  • ঘুষের সম্পৃক্ততা না থাকা
  • অন্যের অধিকার নষ্ট না করা

সুতরাং আমাদের সবাইকে ইসলামের নির্দেশিত পথে রিজিক তালাশ করতে হবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করবেন, সঠিক পথে পরিচালিত করার তাওফিক দিবেন।-আমিন