"ফলের মাছি পোকা (fruit fly)" ফসল বাঁচাতে এর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

সমীরন বিশ্বাস:বাংলাদেশের কৃষিতে ফল ও সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফলের মাছি পোকা (fruit fly) এক মারাত্মক সমস্যা। সবজি বা ফল যখন একটু বড় হয়ে উঠে ঠিক তখনই এর আক্রমনে উদ‌্যান ফসলের বাণিজ্যে বিপুল ক্ষতি হয়। মাছির মতো দেখতে এ পোকাটি কোমল ফলের গায়ে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। এক জরিপে দেখা যায়, কুমড়াজাতীয় ফসল ও আম ফসল উৎপাদনে এ মাছি পোকা বছরে প্রায় ৬৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করে। ফসল বাঁচাতে এই মাছি নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।

ফলের মাছির উপদ্রব বাড়ে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে। গাছপাকা আম বিপননকারীদের জন্য বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় এ পোকার জন্য। শুধু কীটনাশক ব‌্যবহার করে এই পোকাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাই এ পোকা দমনে কিছু আলোচনা এগ্রিলাইফের সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

ক্ষতির প্রকৃতিঃ
স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে গাছে থাকা অবস্থায় পাকা আমের গা চিরে ডিম পাড়ে অর্থাৎ খোসার নিচে ডিম পাড়ে। আক্রান্ত স্থান থেকে অনেক সময় রস বের হয়। বাইরে থেকে দেখে কোনটি আক্রান্ত আম তা ঝুঝা যায় না। এ পোকার কীড়া পাকা আমের মধ্যে প্রবেশ করে শাঁস খেয়ে ফেলে। এতে ফল পচে যায় ও ঝরে পড়ে। আক্রান্ত আম কাটলে ভেতের সাদা রঙের অসংখ্য কীড়া দেখা যায়। সাধারণত এ পোকা আমের ওপর এবং নিচ উভয় অংশে আক্রমণ করে। পোকার আক্রমণ বেশি হলে গাছের সব আম খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ
১, মাছির সমস্ত কীড়া পোকা ধ্বংস করার জন্য আক্রান্ত সব ফল মাটির ০.৫ মিটার গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে.
২, পিউপা যাতে সূর্যের আলোয় মুক্ত হয় সেজন্য জমি নিয়মিত চাষ দিন এবং মৃত পিউপা মাটিতে পুঁতে ফেলুন.
৩, সম্ভব হলে, প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন.
৪, নিয়মিত সেক্স ফেরমেন ফাঁদ স্থাপন করে জমি পর্যবেক্ষণ করুন.
৫, বিশেষ করে বয়স্ক মাছি পোকা ধরার জন্য সমন্বিতভাবে ফাঁদ পাতুন.
৬, আক্রান্ত স্থান থেকে সংক্রামিত ফল অন্য স্থানে স্থানান্তর করবেন না।

জৈব নিয়ন্ত্রণঃ
ফসল সংগ্রহের পরে তাপবাহিত শোধন (গরম বাষ্প বা গরম জল) বা পরিবহনের সময় ও পরে শীতার্ত শোধন দূষণের ঝুঁকি কমায়। বাড়ন্ত ফল প্রতিরক্ষার জন্য মোড়ক ব্যবহার করুন বা ফেরোমোনের ফাঁদ বা প্রোটিন ফাঁদ (যেমন মিথাইল ইউজিনল যা পুরুষ মাছি পোকাকে আকর্ষণ করে) ব্যবহার করুন । ওসিমাম স্যাংটাম ( তুলসি ) পাতার নির্যাস, যার মধ্যে ইউজিনল, বিটা-ক্যারিওফিলিন এবং বিটা-এমেনি রয়েছে, এগুলো তুলোর প্যাডে স্থাপন করলে ০.৮ কিলোমিটারের দূরত্ব থেকে তা মাছিকে আকর্ষণ করে। স্পিনোস্যাডের সাথে মাখানো এসব উপাদান ফলের বাগানে ছিটিয়ে দিলে মাছি পোকাকে আকর্ষণ করে, ফলে এভাবে দমন করা যায়। নিম বীজের নির্যাস মাছি পোকার ডিম পাড়া প্রতিরোধী হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণঃ
সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন । ফেনিট্রথিয়ন (জেনেটিকার- কৃষক বন্ধু) জাতীয় কীটনাশক ফলের মাছি কীড়া পোকার বিরুদ্ধে মাঝারিভাবে কার্যকর। নির্দিষ্ট অবস্থান স্থাপনের জন্য মাছি দমনে স্প্রে ফাঁদের সঙ্গে প্রোটিন মিশ্রিত করতে হবে।

লেখক: সমীরন বিশ্বাস, কৃষিব্যক্তিত্ব