কোরবানি ও প্রাণি খামার নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতি

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

কৃষিবিদ ডক্টর এস এম রাজিউর রহমান:ইসলামে যত বিধান আছে, তার অন্যতম হলো কোরবানি। কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান ব্যক্তি কুরবানী না করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকার পরেও কুরবানী না করে সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে (আবু দাউদ)। তিনি আরো বলেন কুরবানীর পশুর প্রত্যেক পশমের জন্য একটি করে সাওয়াব পাওয়া যায় (ইবনে মাজাহ)।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন আল্লাহর নিকট কুরবানীর পশুর গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া (সূরা আল হাজ¦ আয়াত ৩৭)। কুরবানীর মাধ্যমে মুসলমানের ঈমান ও তাকওয়ার পরীক্ষা হয়ে থাকে। আর তাকওয়াই হচ্ছে কুরবানীর প্রাণশক্তি। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও অশেষ পুণ্য পাওয়ার আশায় জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত নির্দিষ্ট পশু জবাই করা হলো কোরবানি। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জবাই করাই হলো কোরবানি।

সামনে কোরবানির ঈদ। মুসলমাদের এই ধমীয় উৎসব কুরবানীর সময় অনেক গরু, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়ে থাকে। তাই গরু মোটাতাজা, ছাগল ও ভেড়া এসবের যত্নআত্তি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ভাইয়েরা।  প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকেন, যা একটি লাভজনক ব্যবসাও বটে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তথ্য সূত্রে জানা যায়  যে,  এ বছর (২০২২) কোরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু প্রস্তুত করা রয়েছে। গতবারের মতো এবারও বেসরকারি উদ্যোক্তার পাশাপাশি সরকারিভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির প্রাণি বিক্রিয় করা হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত (২০২১) বছর কোরবানিযোগ্য প্রাণির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি প্রাণি। প্রায় ২৮ লাখ গবাদিপশু অবিক্রিত থাকে।

ঈদুল আযহায় করোনা মহামারীর মধ্যে সারাদেশে ২০২১ সালে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার গবাদিপ্রাণি কোরবানি হয়েছিল। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে বিগত ২০২০ সালে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপ্রাণি ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি গবাদিপ্রাণি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয়েছে। ২০২১ সালে অনলাইনে মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯টি প্রাণি বিক্রি হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। ২০২০ সালে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রাণি বিক্রি হয়েছিল ৮৬ হাজার ৮৭৪টি, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৫৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার ৮২৯ টাকা। প্রতি বছর গড়ে ৫০-৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো কোরবানির প্রাণি বেচা-বিক্রি হয়। সরকারিভাবে অনলাইনে ক্রয়কৃত গরু পছন্দ না হলে টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা এ বছর সংযোজন করা হয়েছে।

প্রাণি কম বিক্রি হলে অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। গবেষকরা বলছেন, ঈদ-উল-আযহায় গবাদি প্রাণি বিক্রি করে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হাতে নগদ টাকা আসে। কোরবানির প্রাণি বিক্রি থেকে যে টাকা পায়, এর মাধ্যমে সারা বছর নগদ টাকার চাহিদার কিছু অংশ পূরণ হয়। বাকি প্রতিদিনের প্রয়োজন অন্যান্য শস্যের মাধ্যমে পূরণ হয়। আমরা প্রতিবছর প্রাণিসম্পদ খাত থেকে আমাদের চাহিদার ৪৪ শতাংশ আমিষ পাই যার ৫২ শতাংশ আসে রেড মিট থেকে। আমাদের দেশে রেড মিটের উৎস হলো গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। দেশের আধিকাংশ জনগোষ্ঠী উদ্ভিজ্জ প্রোটিনই বেশি গ্রহণ করে। কিন্তু উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘অ্যামিনো অ্যাসিড’ তেমন একটা থাকে না। প্রাণিজ প্রোটিন অ্যামিনো অ্যাসিডের মূল উৎস। বাড়ন্ত শিশু সহ সকল বয়সের মানুষের জন্য প্রাণিজ প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, যুব অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খামারীগণ প্রাণি মোটাতাজাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন এর আওতাধীন সহযোগি এনজিও সমুহের কাছে মৌসুমী ঋণ গ্র্রহন করে উক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। ঈদ-উল-আযহার জন্য গড়ে উঠা প্রাণি খামারগুলো বাংলাদেশের গ্রামের অর্থনীতিকে গতিশীল করে। প্রান্তিক খামারিরা চার-ছয় মাস করে বছরে দুই-তিনটা সার্কেল গরু মোটাতাজা করে থাকে।  এ সময় কোরবানির প্রাণিগুলো খুব যত্নে লালন পালন করা হয়। সব খরচ বাদ দিয়েও একটি গরুতে অন্ততঃ ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে অনেকে এসব খামারের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এ খাত বড় ভূমিকা রাখছে।

চামড়া শিল্প জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুর চামড়া কেনা-বেচা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা। বাংলাদেশে সারা বছর যত চামড়া বাজারে আসে তার ৬০ শতাংশই আসে এই ঈদের সময়। এই চামড়াকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। জিডিপিতে চামড়া শিল্পের শরিকানা প্রায় ০.৪০ শতাংশ। মোট রফতানি আয়ে এ খাতের অবদান ৩.৩২ শতাংশ। তৈরি পোশাক শিল্পের পর রফতানি আয় অর্জনের ক্ষেত্রে এ খাতের স্থান কখনও দ্বিতীয়, কখনও তৃতীয়। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে এ খাতের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন উৎসাহব্যঞ্জকভাবে বর্ধিষ্ণু। এ খাত থেকে ২০১১-১২ সালের ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আয় ২০২০-২১ সালে প্রায় চারগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,২৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এ শিল্পের অধীনে আছে ট্যানারিসহ, অসংখ্য জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও সুদর্শন সরঞ্জামাদি তৈরির কারখানা। তাতে সরাসরিভাবে নিয়োজিত রয়েছে লাখ-লাখ শ্রমিক-কর্মচারী।

এদিকে বিগত বছরগুলিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়ার দরপতনের যে চিত্র দেখা যায় তা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। উৎপাদনকারীগণ পানির দামে বিক্রি করে দেন কাঁচা চামড়া। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র মানুষ,বঞ্চিত হয় এতিম ও মিসকিন। আবার ২০১৯ সালেই ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের কাঁচা চামড়া ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

ওমাসম (তৃতীয় পাকস্থলীর) আর পিজল (পেনিস) এখন নিয়মিত রফতানি হচ্ছে। গরু জবাইয়ের পর এক সময় নদী খালে ফেলে দেয়া হতো এসব উচ্ছিষ্ট। যা পরিবেশও দূষণ করতো। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা মূল্যের ওমাসম রফতানি হয়। করোনা সঙ্কটেও ৩২০ কোটি টাকার ওমাসম বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়। বর্হিবিশ্বে বেড়েই চলছে দেশের গরু-মহিষের ওমাসম ও পিজলের চাহিদা। এ থেকে তৈরি হয় উন্নত মানের স্যুপ ও সালাদ যা চীন,হংকং, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে বেশ জনপ্রিয় খাবার। কোরবানির ঈদে ওমাসম ও পিজল সংগ্রহের অন্যতম সময়। তাই এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়ছে। কিন্তু রপ্তানির জন্য ওমাসম ও পিজলের সংগ্রহের ব্যাপ্তী শুধুমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরকেন্দ্রীক হওয়ায় দেশব্যাপী সংগ্রহযোগ্য বিশাল পরিমাণের ওমাসম ও পিজলের বৃহদাংশ রপ্তানী প্রক্রিয়ায় না আসতে পারায় বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

গরু-মহিষ জবাইয়ের পরে চামড়া, ওমাসম ও পিজল লবণ দিয়ে সংগ্রহ করা হয়। এসব সংরক্ষণের জন্য আমাদের প্রতিবছর ১ লাখ মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন হয়। এদিকে কোরবানির আগে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট হয় প্রতিবছর। এ বছর ঈদের আগের দিন ৭৪ কেজি বস্তা লবণের দাম ছিল ৫০০ টাকা। ঈদের দিন তা ৭০০ টাকা এবং পরে তা ১২০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। জাতীয় অর্থনীতিতে লবণ শিল্পখাত প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার অবদান রাখছে। বাংলাদেশের প্রায় ১০-১৫ লক্ষ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লবণ শিল্পের উপর নির্ভরশীল।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত (২০২১) বছর কোরবানিযোগ্য প্রাণির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি প্রাণি। প্রায় ২৮ লাখ গবাদিপশু অবিক্রিত থাকে। ঈদুল আযহায় করোনা মহামারীর মধ্যে সারাদেশে  ২০২১ সালে  ৯০ লাখ ৯৩ হাজার গবাদিপ্রাণি কোরবানি হয়েছিল। কোরবানির জন্য গত বছর (২০২১) গরুসহ অন্যান্য গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ করেও খামারি ও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেননি । প্রায় ২৮-২৯ লাখ গবাদিপশু (২৪%) অবিক্রীতই থেকে গিয়েছিল । আবার গবেষকরা বলছেন, ঈদ-উল- আযহায় পশু বিক্রির জন্য অধিক বিনিয়োগে লাভ বেশি হলেও ঝুঁকি থাকে, আবার সবার ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, গবাদিপশু উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত, বর্জ্যব্যবস্থাপনা, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণসহ ট্যানারিতে পৌঁছা পর্যন্ত বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে অসংখ্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায় ও উপখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিপুল জনগোষ্ঠী।

নিম্নোক্ত (লেখচিত্রে বামপার্শ্বে) ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কোরবানির পশু বিক্রির সংখ্যা দেখানো হয়েছে। যেখানে লিনিয়ারলি পশু বিক্রির সংখ্যা নিম্নমুখি। এ ছাড়া প্রবণতা বিশ্লেষণে (Trend Analysis) টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (SDG) ২০৩০ বাস্তবায়ন কালেও কোরবানির পশু বিক্রির সংখ্যা উর্দ্ধমুখি হয় না  (লেখচিত্র -ডানপার্শ্ব)


 
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষিসহ দেশের প্রতিটি খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। সেক্ষেত্রে গবাদিপশু উৎপাদন, কোরবানির পশু প্রস্তুতকরণ, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা, খামারি উদ্বুদ্ধকরণ ও উদ্যোক্তা তৈরি, খোরপোষ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর, কোরবানীর পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা, সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ-পিপিপি), সুসংগঠিতভাবে দেশীয় বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনসহ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কার্যক্রমের সম্প্রসারণ এবং বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং শক্তিশালীকরণ এর দিকে নজর দিতে হবে।

২০৩০ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্বপ্নের উন্নত দেশের সম্মান পেতে হলে; প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দরকার টেকসই পরিকল্পনা। কুরবানীর প্রাণি উৎপাদন, বিপণন, চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও রপ্তানি প্রভৃতি কর্মকান্ডে দরকার সুপরিকল্পিত কার্যক্রম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে এ বছর পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় বিভাগভেদে কোরবানির গরু-মহিষ বিক্রির যে সংখ্যা দেখানো হয়েছে, তা নিম্নোক্ত লেখচিত্রে উপস্থাপিত হয়েছে। লেখচিত্রে বামপার্শ্বে বিভাগওয়ারী ২০২১ সালে কোরবানির গরু-মহিষ বিক্রি এবং ডানপার্শ্বে কোরবানির ছাগল-ভেড়া  বিক্রির সংখ্যা দেখানো হয়েছে।



বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী হাউজহোল্ড অনুপাতে ২০২১ সালে কোরবানির গরু-মহিষ/ছাগল-ভেড়া বিক্রির সংখ্যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, গরু-মহিষ কোরবানির সংখ্যা চিটাগাং বিভাগে বেশি হলেও ছাগল-ভেড়া কোরবানির সংখ্যা যথাক্রমে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে বেশি। অপরপক্ষে গরু-মহিষ কোরবানি সংখ্যা ময়মনসিংহ বিভাগে কম। আবার হাউজহোল্ড অনুপাতে গরু-মহিষ কোরবানি সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে। আর সবচেয়ে কম দেখা যাচ্ছে বরিশাল বিভাগে। উক্ত লেখচিত্রের মাধ্যমে আমরা গবাদি প্রাণি উৎপাদন কর্মসূচির পরিকল্পনা উন্নয়ন ও পরিমার্জন করতে পারি। এখানে প্রতিটি বিভাগে কুরবানীর সংখ্যা কম-বেশি হওয়ার পিছনে কারন সমুহ কি রয়েছে তা উদঘাটন করা প্রয়োজন। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ, প্রান্তিক ও অগ্রজ খামারি এবং ফড়িয়া সহ উপকরণ সরবরাহের সহিত জড়িত ব্যবসায়ীবৃন্দকে সমীক্ষার আওতায় এনে, প্রকৃত কারণসমূহ উদঘাটন করে একটি টেকসই গুণগতমানের কার্যক্রম হাতে নেয়া যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, রংপুর বিভাগে কোরবানির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (প্রতিটি হাউজহোল্ডে ১.৪৬)। এর পিছনে এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে যেমন উক্ত এলাকায় গবাদিপ্রাণি বাণিজ্যিকভাবে লালন পালন হচ্ছে; খামারি গবাদি প্রাণি পালনে বেশি সচেতন;  দারিদ্র্যের কারণে গরু-মহিষ/ভেড়া ছাগল উক্ত সময় বেশি-বেশি করে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে; ধর্মীয়সংবেদনশীলতার মাত্রা; আর্থিক সঙ্গতি বেশি থাকা; উৎপাদন খরচ কম থাকায় বাজার দর কম থাকা ইত্যাদি। আবার বরিশাল বিভাগে হাউজহোল্ড অনুপাতে কোরবানির প্রাণির সংখ্যা সবচেয়ে কম (০.০১)। উক্ত পর্যালোচনায় বরিশাল বিভাগে কোরবানির গরু কম বিক্রয় হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমন, এলাকায় প্রযুক্তি সম্প্রসারণের ঘাটতি,খামারি কর্তৃক প্রযুক্তি গ্রহনের অনিহা, প্রাণি বাজারজাতকরণের অসুবিধা, পরিবহনের অসুবিধা ইত্যাদি।  

আশার কথা হলো, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি নেতৃত্বের কারণে আমরা পদ্মা সেতু পেয়েছি যার মাধ্যমে দক্ষিণবঙ্গের প্রানিসম্পদ উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিন হবে। আগামীতে আমরা অন্য বিভাগের মত বরিশাল বিভাগেও কুরবানীর পশুর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেখতে পাবো।

অংশীজনের সম্পৃক্ততা ও যুগোপযোগী সমীক্ষার আলোকে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে টেকসই প্রাণিসম্পদ কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশ অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সমর্থ হবে। আর এভাবেই অর্জিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের একটি স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ।

লেখক: জাতীয় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা, বাংলাদেশ।
ই-মেইল:This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.