সহজলভ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির উৎস ডিম

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

প্রফেসর ডঃ মোঃ ইলিয়াস হোসেন:বাজারে যে সকল আমিষ জাতীয় খাবার পাওয়া যায় তার মধ্যে ডিম অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং সহজলভ্য একটি খাবার। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সব ধরনের মানুষের জন্য ডিম একটি উপকারী খাবার। তাছাড়া দামে কম হওয়ায় পোল্ট্রিশিল্প হতে প্রাপ্ত ডিম এবং মাংস সব শ্রেণীর পেশার মানুষের জন্য আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। বর্তমান সময়ে গরিবের পুষ্টি বলতে পোল্ট্রিশিল্প থেকে প্রাপ্ত ডিম ও মাংস কে বুঝায়। পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশের ফলে কয়েক বছর আগেও আমিষের চাহিদা পূরণ করতে না পারা দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখন সহজেই তাদের পুষ্টি চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করতে পারছেন। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য ডিম ও মাংসের চাহিদা আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে।

১৯৯৬ সালে ভিয়েনাতে "আন্তর্জাতিক এগ কমিশন" এর উদ্যোগে অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার ডিম দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, ওয়ার্ল্ড'স পোল্ট্রি সাইন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা এবং এফএও এর উদ্যোগে নানা ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে এবছরও অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস-২০২১। এবারের ডিম দিবসের শ্লোগান "প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই"। ডিম দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিমের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা, ডিম খাওয়ার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, ডিম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সমূহ দূর করা এবং ডিম উৎপাদনের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তি, খামারি ও প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ প্রদান করা।

একটি ডিম থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় এবং শরীরে তাদের কাজ নিয়ে আলোচনা করা হলো

ক্যালরিঃ একটি ডিম থেকে সাধারণত ৭৭ কিলো ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। ডিম দীর্ঘ সময় শক্তি জোগায় এবং ক্ষুধা কমায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়েটে ডিম রাখা জরুরি। সকালের নাশতায় একটি ডিম সারা দিনের পুষ্টি চাহিদা অনেকটুকুই পূরণ করতে সহায়তা করে।
প্রোটিনঃ একটি ডিম থেকে প্রায় ৬.৩ গ্রাম উচ্চমানের প্রোটিন পাওয়া যায়। ডিমের প্রোটিন শরীরে খুব সহজে শোষিত হয়। শরীরের গঠন ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রোটিন অত্যাবশ্যকীয়। এ ছাড়া প্রোটিন বিভিন্ন অঙ্গ, ত্বক, চুল এবং শরীরের বিভিন্ন টিস্যু পুনর্গঠনে সহায়তা করে।

আয়রনঃ ডিম থেকে যে আয়রন পাওয়া যায়, তা শরীরে খুব সহজে শোষিত হয়। এই আয়রন শরীরের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা দূর  করতে সাহায্য করে।

ভিটামিন এঃ ডিম থেকে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। এই ভিটামিন এ ত্বক এবং চোখের কোষের সুস্থতা দান করে। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি এর একটি ভালো খাদ্য উৎস হচ্ছে ডিম। ভিটামিন ডি হাড় এবং দাঁত সুস্থ ও মজবুত করে। কিছু কিছু ক্যান্সার কোষ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।

ভিটামিন ইঃ ভিটামিন ই দেহে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ও চুলের জন্য ভিটামিন 'ই' গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরকে সুস্থ রাখে, রোগ প্রতিরোধ এবং প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

ভিটামিন বি-১২ঃ এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে এবং হার্ট সুস্থ রাখে।

ফলেটঃ ডিমে ফলেট থাকে, যা নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। ফলেট এর অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ফলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর জন্মগত ত্র“টি দূর করতে সহায়তা করে।

সেলেনিয়ামঃ ডিমে প্রাপ্ত সেলেনিয়াম পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন ই-এর সঙ্গে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা শরীরের বিভিন্ন টিস্যুর ক্ষয় রোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

কোলিনঃ ডিমে প্রাপ্ত কোলিন মস্তিষ্কের বিকাশ এবং কার্যক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখে। এটি গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কোলেস্টেরলঃ গবেষণায় জানা গেছে, ডিম থেকে যে কোলেস্টেরল পাওয়া যায় তা আমাদের শরীরে বিশেষ কোনো ক্ষতি করে না।

ডিমের কুসুম নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা
ডিমের কুসুম নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। যেহেতু ডিমের কুসুমে অধিকমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে তাই ধারণা করা হতো যাদের করোনারি হার্ট ডিজিজ আছে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাদের জন্য ডিমের কুসুম ক্ষতিকর। পরামর্শ দেওয়া হতো কুসুম ছাড়া ডিম খাওয়ার জন্য। কিন্তু, বর্তমান গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ডিমের কুসুম থেকে যে কোলেস্টেরলের পাওয়া যায় তা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় না এবং এটি করোনারি হার্ট ডিজিজ এর সাথে সম্পর্কিত নয়। প্রতিদিন কুসুমসহ একটি ডিম নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। ডিমের কুসুমে একটি ডিমের প্রায় অর্ধেক পুষ্টি উপাদান থাকে। এছাড়া কুসুমে আমাদের জন্য উপকারী উপাদান ফলেট, কোলিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি,  ভিটামিন ই, লিউটিন ও জিয়াজ্যান্থিন থাকে। তাই কুসুম বাদ দিয়ে নয় বরং কুসুম সহ প্রতিদিন একটি ডিম সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত।

মুরগি ও হাঁসের ডিমের পুষ্টিমানের আলোচনা

মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিম আকারে বড় হয়। এ ছাড়াও হাঁসের ডিমের খোসা মুরগির ডিমের তুলনায় বেশি শক্ত হয়। আকারে বড় হওয়ার কারণে হাঁসের ডিমের কুসুমও বড় হয়। কার্বহাইড্রেট ও মিনারেলের পরিমাণ সমান হলেও হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ সামান্য বেশি থাকে। উভয়ের ডিমেই সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, তামা, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে। তবে হাঁসের ডিমে সব কিছুরই পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে রয়েছে ১৮১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি। আর মুরগির ডিমে আছে ১৭৩ কিলোক্যালরি। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ ১৩.৫ গ্রাম এবং ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ ১৩.৩ গ্রাম ৷ হাঁসের ডিমের ফ্যাট থাকে ১৩.৭ গ্রাম, মুরগির ডিমে থাকে ১৩.৩ গ্রাম। আবার মুরগির ডিমে ক্যালসিয়াম রয়েছে ৬০ মিলিগ্রাম, লোহা রয়েছে ২.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ রয়েছে ২৯৯ মাইক্রোগ্রাম। অন্যদিকে, ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে ক্যালসিয়াম ৭০ মিলিগ্রাম, লোহা ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৬৯ মাইক্রোগ্রাম থাকে। হাঁস, মুরগি উভয়ের ডিমেই থিয়ামিন, নিয়াসিন, রাইবোফ্লোভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি ১২ ও রেটিনল থাকলেও হাঁসের ডিমে সব ভিটামিনের পরিমানই বেশি থাকে। ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ ৩.৬৮ গ্রাম, ১০০ গ্রাম চিকেনে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ ৩.১ গ্রাম। হাঁসের ডিমে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ মুরগির ডিমের থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। হাঁসের ডিম পুষ্টিকর হলেও কোলেস্টেরলের পরিমাণও বেশি থাকে। ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে যেখানে কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় ৮০০ মিলিগ্রাম, সেখানে মুরগির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় ৩৭০ মিলিগ্রাম। তাই হার্টের সমস্যা থাকলে অবশ্যই দূরে থাকুন হাঁসের ডিম থেকে। যারা হাই প্রোটিন ডায়েট মেনে চলতে চান তারা কুসুম ছাড়া হাঁসের ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন।

বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য ডিমের গুরুত্ব

শিশুঃ সাধারণত এক বছর বয়সের পর থেকে শিশুকে ডিম খাওয়ানো শুরু করতে হয়। ডিমের ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন শিশুর দেহের ক্ষয়পূরণ ও সঠিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। ডিমের কুসুমে কোলিন থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। এ ছাড়া ডিমে ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, আয়রনসহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে, যা শিশুর বিকাশে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। শিশুদের ক্ষেত্রে এক বছর বয়সের পর থেকে দিনে একটি ডিম এবং তিন বছর বয়সের পর থেকে দুটি ডিম খাওয়া যেতে পারে।

কিশোরঃ এই বয়সে শরীরের সব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন অঙ্গেও পরিপক্বতা ও পরিবর্তন হয়, বিভিন্ন হরমোন ও এনজাইমের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। এছাড়া লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার জন্য সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় ডিম রাখা হলে তা দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। কৈশোর ও টিনএজ বয়সে দিনে দুটো ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

প্রাপ্তবয়স্কঃ যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক, তাঁরা কাজের চাপে অনেক সময় নিজের খাবারের প্রতি মনোযোগী থাকেন না ও একটি পরিকল্পিত ডায়েট ফলো করেন না। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ঘাটতি দেখা যায়। এই পুষ্টি ঘাটতি পূরণের জন্য এবং স্বল্প সময়ে এনার্জি পাওয়ার জন্য ডিম খুবই উপকারী। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ডিমের কুসুমসহ দুটো ডিম খেতে পারেন। এ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের অনেক সময় বিভিন্ন হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা যায়; ডিমের প্রোটিন এই হরমোন এবং বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতা সঠিক রাখতে সহায়তা করে।

পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিঃ এই সময়ে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ পরিবর্তন আসে এবং পুষ্টি চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কারণ, শরীরের ভেতর যে ক্ষয় হয়, সেটা আর তখন পূরণ হয় না। তাই খাবারের মাধ্যমে এই ক্ষয় প্রতিরোধ করতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে একটি চমৎকার উপাদেয় খাবার হচ্ছে ডিম। বয়স্ক মানুষের খাদ্যতালিকায় দুটি ডিম রাখা যায়।

গর্ভবতী মাঃ একজন গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। ভ্রূণের সঠিক গঠন ও বিকাশের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন। ডিমে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান বিদ্যমান তাই গর্ভবতী মা ২ টি ডিম খেলে তার পুষ্টি উপাদানের চাহিদার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব। ডিমে বিদ্যমান ফলেট ও কোলিন ভ্রূণের সুস্থতা দান করে এবং জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডিজাইনার ডিম
বর্তমান বাজারে স্বাভাবিক ডিমের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনার ডিম পাওয়া যায়। ভোক্তারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ি এই সকল ডিম ক্রয় করতে পারেন। যেমনঃ ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ  ডিম, ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ ডিম, সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ ডিম, আয়োডিন সমৃদ্ধ  ডিম, লিউটিন সমৃদ্ধ  ডিম, হারবাল সমৃদ্ধ ডিম, কঞ্জুগেটেড লিনোলেইক এসিড (CLA) সমৃদ্ধ ডিম, ডোকোসাহেক্সানোইক এসিড (DHA) সমৃদ্ধ  ডিম, লো কোলেস্টেরল ডিম,  ইমিউনোমোডুলেটিং ডিম, এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ডিম, পিগমেন্ট সমৃদ্ধ কুসুমযুক্ত ডিম, ফার্মাসিউটিকাল ডিম ইত্যাদি

পোল্ট্রি শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প। এ শিল্পে বর্তমানে ৬০ লক্ষের অধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল ও বেকার সমস্যায় জর্জরিত দেশে পোল্ট্রিশিল্প একটি আশীর্বাদ। অনেক বেকার যুবক পোল্ট্রি লালন-পালন করার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন এবং অন্যদেরও কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে হাজার হাজার ছোট বড় মাঝারি আকারের লেয়ার ও ব্রয়লার খামার রয়েছে। এফএও থেকে উন্নয়নশীল দেশের জন্য ডিম গ্রহণের নির্ধারিত হার ইতঃমধ্যে আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারলে গার্মেন্টস শিল্পের মতো পোল্ট্রিশিল্প থেকেও রপ্তানি করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

আমাদের পোল্ট্রিশিল্প দেশীয় পুঁজি এবং দেশীয় উদ্যোগ এর ফলে তিলে তিলে গড়ে ওঠা একটি শিল্প। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই শিল্প নতুন বিপ্লবের পথ দেখিয়েছে। তাই যে কোনো মূল্যে আমাদের এই শিল্প রক্ষা এবং বিকাশের পথ খোলা রাখতে হবে। অতীতে ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১১ সালে বার্ড ফ্লু এর ভয়াবহ সংক্রমণের কারণে আমাদের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং প্রায় ৫০% খামার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে পোল্ট্রিশিল্প বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মুরগির খাবার ভ্যাক্সিন, মেডিসিন, এন্টিবায়োটিক এবং এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিসহ আমদানিকৃত পণ্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারীকালীন লকডাউনে খামারিরা তাদের উৎপাদিত ডিম ও  মুরগি সঠিকভাবে বিক্রি করতে পারেনি, ফলস্বরূপ অনেক ছোট ও মাঝারি আকারের খামার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এইসব সংকটকালীন সময় মোকাবেলার জন্য আমাদের খামারিদের পাশে থাকতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে খামারিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও অনুদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি পোলট্রি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের শিল্প রক্ষায় এবং বিকাশের জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পোল্ট্রিশিল্পের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে পারলে একদিকে যেমন এটি বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে পাশাপাশি এ শিল্প আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আরো বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

লেখক:সাবেক বিভাগীয় প্রধান
পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
ই-মেইলঃ This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.