বঙ্গবন্ধু: দূরদর্শী ভাবনা এবং বাস্তবতা

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

ড. মো. আনোয়ার হোসেন:একটি পরিসংখ্যানের মাধ্যমে আমি লেখাটি শুরু করতে চাই। কৃষিবিদ দিবস-২০২১ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বাণী হতে জানা যায় যে, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম উৎপাদনে ৭ম, আলু উৎপাদনে ৭ম এবং পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম স্থানে থেকে বিশ্ব-পরিমণ্ডলে সমাদৃত। বিশ্বে ধান, পাট, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা ও আলু এবং সবজি ও মৎস্য-উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যেমন মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, প্রাকৃতিক উৎসের মাছে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় এবং ফসলের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে । ২০০৯ সালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন।

করোনার ভয়াল থাবায় সারা বিশ্বে অর্থনীতি চরম সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশও তার বাহিরে নয়। অর্থনীতির অনেকগুলো খাত হুমকির মুখে। তার মধ্যে কৃষির সফলতা এবং উন্নয়ন লক্ষণীয়। পরিসংখ্যানে যেমন স্পষ্ট, তেমনি সহজে অনুমেয়। এইতো সেদিনও যে দেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির, আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অচিরেই খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ হবে বলে আশা করা যায়। ১৯৭১-৭২ সালে যেখানে চাল উৎপাদন ছিল মাত্র ১ কোটি মেট্রিক টন, সেখানে ২০২০ সালে তা বেড়ে প্রায় ৪ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এই উন্নতির ধারাবাহিকতার জন্য প্রয়োজন ছিল একটা সঠিক সূচনার, একটা দূরদর্শী ভাবনার এবং একটা যথাযথ স্বপ্ন বপন করার। সেই সূচনা কারিগর, দার্শনিক এবং স্বপ্নদ্রষ্টা সার্বজনীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার অনন্য উদাহরণ হলো ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বঙ্গবন্ধুর সেই দূরদর্শী ভাষণ। যে ভাষণে তিনি কৃষি বিপ্লবের কথা বলেছিলেন এবং বপন করেছিলেন টেকসই কৃষির মূলভিত্তি। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের কৃষি শিক্ষায় আকৃষ্ট করা ব্যতিরেকে আধুনিক এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই এসময় তিনি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, তিনি কৃষিবিদদের টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ভাতা প্রদানেরও প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে। আমরা কেন অন্যের কাছে খাদ্য ভিক্ষা চাইব। আমাদের উর্বর জমি, আমাদের অবারিত প্রকৃতিক সম্পদ, আমাদের পরিশ্রমী মানুষ, আমাদের গবেষণা সম্প্রসারণ কাজে সমন্বয় করে আমরা খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করব। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার।’ সেই ভাবনার প্রতিফলন কৃষিশিক্ষায় আজ মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা অতি আগ্রহী। সেই দূরদর্শী ভাবনার ফসল আজকের সফল কৃষি। এই সফলতার জন্যই ১৯৭১ সালে যে দেশে উৎপাদিত ১ কোটি টন খাদ্যশস্য ৭ কোটি মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা দিয়েছে, আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসেও তার চেয়ে কম জমিতে সে সময়ের তুলনায় উৎপাদিত প্রায় চারগুণ বেশি খাদ্যশস্য ১৭-১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এর চেয়ে বড় সফলতা আর কিছু হতে পারে না। এই একটি সফলতাই সারা পৃথিবীর কাছে যে বার্তা পৌঁছে দেয় তা হলো- আগামীর বাংলাদেশ নিশ্চয়ই যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাফল্যের সঙ্গে টিকে থাকার সামর্থ্য রাখে।

বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা দিয়েই থেমে থাকেননি। কৃষির সার্বিক উন্নয়নে জোরদেন কৃষি শিক্ষা ও কৃষি গবেষণার উপর। তার সুষ্পষ্ট প্রতিফলন দেখতে পাই বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৭৮)। উল্লেখ, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মজুরি বৃদ্ধি, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সমতাভিত্তিক আইন ব্যবস্থাসহ অর্থনৈতিক আমূল সংস্কার, বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক টেকসই গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় মূল ভিত্তি রচনা। সেখানে মোট ৩৩ কোটি টাকা কৃষি শিক্ষা ও কৃষি গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়। কৃষিশিক্ষা, গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আয়োজন করেন। টেকসই কৃষি উৎপাদন তথ্য টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি শিক্ষা এবং কৃষি গবেষণার যে কোন বিকল্প নেই তা তিনি উপলব্দি করতে পেরেছিলেন। তার জন্য কৃষি গবেষণার মাধ্যমে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, ইক্ষু গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেন। আধুনিকায়ন করা হয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের। বিশেষ করে দেশে ধান গবেষণার গুরুত্ব অনুধাবন করেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে আইন পাসের মাধ্যমে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন এবং ধানের বিষয়ক পদ্ধতিগত এবং নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা তখন থেকেই শুরু হয়, যার সফলতা আজ সর্বস্তরে দৃশ্যমান। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর গবেষণার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে দূরদর্শী ভাবনা, আধুনিক দর্শন এবং উন্নত চিন্তার প্রকাশ ঘটে।

বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে কথা বললে এবং ব্রিটিশ আমলে গঠিত বিভিন্ন কৃষি কমিশনের প্রতিবেদন থেকে স্বাধীনতার আগের কৃষির চিত্র ফুটে উঠে। ষাটের দশকে সারা পৃথিবীতে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হলেও বাংলাদেশে তার ছোঁয়া লাগেনি। কৃষি খাতে উৎপাদন ছিল খুবই কম এবং বছরে ঘাটতি থাকতো প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টন। ফলে বাংলার ঘরে ঘরে ছিল চরম খাদ্যাভাব। একদিকে যেমন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষকদের তেমন কোনো ধারণা ছিল না, অন্যদিকে উন্নত বীজ, রাসায়নিক সার, সেচ ও বালাইনাশকসহ অন্যান্য কৃষি উপকরনের ছিল চরম সংকট এবং দুর্মূল্য। ফলে তাদের জীবন ধারণ এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। খাদ্যাভাবের এই ধারাবাহিকতার মধ্যেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যার দরুন, ১৯৭১ সালে এ দেশে দারুণ ভাবে বিঘ্নিত হয় কৃষি উৎপাদন। কৃষক হাতে তুলে নেয় যুদ্ধের অস্ত্র। অনেকে বেচেঁ থাকার আশায় পালিয়ে বেড়ায় পরিবার ছেড়ে। ফলে সারাদেশে বিঘ্নিত হয় কৃষির উৎপাদন এবং বিপণন ব্যবস্থা।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর এক ভাষণে তা আরো স্পষ্ট ভাবে বুঝা যায়। তিনি বলেন, ‘আমার চাল নাই, ডাল নাই, রাস্তা নাই, রেলওয়ে ভেঙে দিয়ে গেছে, সব শেষ করে দিয়ে গেছে ফেরাউনের দল।’ যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি চরম আকার ধারণ করে। ১৯৭১-৭২ সালে দেশে খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০ লাখ টন, যা ছিল মোট উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ। তারপর থেকে শুরু হয় কৃষির উন্নয়ন গাথা। ১৯৬৮-৬৯ সালে শক্তিচালিত সেচ পাম্পের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার যা ১৯৭৪-৭৫ সালে এই সংখ্যা গভীর-অগভীর মিলে ৪১ হাজারে উন্নীত করা হয়। ফলে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ লাখ একরে উন্নীত হয়। ১৯৭২ সালের ৩১ মে বিকেল ৪.০০ টায় আকস্মিকভাবে বিএডিসি পরিদর্শন, দীর্ঘ ৪৫ মিনিট অবস্থান, বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে আলোচনাই বলে দেয় বঙ্গবন্ধুর আধুনিক কৃষি ভাবনার কথা। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া কৃষির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেচ সম্প্রসারণের মাধ্যমে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষককে উৎসাহিত করা, কৃষি উপকরণ সরবরাহ সহজ ও সুলভ করা এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায়সংগত মূল্য কিছুটা নিশ্চিত করার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে আগ্রহী করা তোলা হয় কৃষকদের এবং বাড়ানো হয় কৃষির সার্বিক উৎপাদন।

দ্রুততম সময়ে ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্তি দেয়া হয়, কৃষকের সকল বকেয়া ঋণ সুদসহ মাফ করে দেয়া হয়, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা চিরদিনের জন্যে রহিত করা হয়, আগের সমস্ত বকেয়া খাজনাও মাফ করা হয় এবং প্রথম প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সামাজিক ন্যায় বিচার ও দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে কৃষি-উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। তখন দেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ছিল শতকরা ৩৫ ভাগ। বিরাজমান খাসজমির সাথে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণযোগ্য জমির সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত মালিকানার পরিধি কমিয়ে পরিবারপিছু জমির পরিমান সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা নির্ধারণ করে দেন। নানামূখি বিভিন্ন উদ্যোগে তিনি কৃষির একটি শক্ত ভিত রচনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়।

কৃষি এবং কৃষকের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি সর্বক্ষেত্রেই প্রাধান্য পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনে। বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয় একুশ দফা কর্মসূচী হতে। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগ শাসনের অবসানের উদ্দেশ্যে আওয়ামী মুসলীম লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট নামে একটি নির্বাচনী মোর্চা গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু এই নির্বাচনী জোটের অংশীদার ছিলেন। প্রার্থী হন কোটালিপাড়া-গোপালগঞ্জ আসনে। যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২১টি প্রতিশ্রুতি সহকারে যে নির্বাচনী কর্মসূচী ঘোষণা করা হয় তার প্রধান ছয়টি দফাই ছিল কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। জোটের অন্যতম একজন নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর অন্যতম একজন প্রণেতা।

এই ছয়টি দফা হলো- ১. বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ও সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ এবং খাজনা হ্রাস ও সার্টিফিকেট মারফত খাজনা আদায় রহিত করা হবে, ২. পাট ব্যবসা জাতীয়করণ এবং তা পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় আনা এবং মুসলিম লীগ শাসনামলের পাট কেলেঙ্কারির তদন্ত ও অপরাধীর শাস্তি বিধান করা, ৩. কৃষিতে সমবায় প্রথা প্রবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে কুটির শিল্পের উন্নয়ন, ৪. পূর্ববঙ্গকে লবণ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, ৫. খাল খনন ও সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বন্যা ও দূর্ভিক্ষ রোধ এবং ৬. পূর্ববঙ্গে কৃষি ও শিল্প খাতের আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বী করা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মূলনীতি মাফিক শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।

এই কর্মসূচী সমূহ পর্যালোচনা করলে কৃষি এবং কৃষকের স্বার্থরক্ষার দূরদর্শী ভাবনার একটি চিত্র পাওয়া যায়। মোট কথা, দেশকে খাদ্যে স্বয়ম্ভর করার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল এই ছয় দফায়। এভাবেই তিনি রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্বের মধ্য দিয়ে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত হন এবং নিশ্চিত করেন কৃষির শক্ত ভিতের।

সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য (এসডিজি), ডেল্টা প্লান, ৮ম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতীয় কৃষি নীতি এবং নির্বাচনী ইশতেহার (২০১৮) ঘোষণা করেছে। সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন কার্যক্রম এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষিতে নিযুক্ত ৮.৮৫ মিলিয়ন হেক্টর জমির মাধ্যমে খাদ্যের যোগান দিতে হয় প্রায় ১৭ কোটি মানুষের। ২০৫০ সালে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২১-২২ কোটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষি জমির পরিমান ০.৪১ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। ভবিষ্যতে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য আরও বেশি খাদ্যের প্রয়োজন হবে। হ্রাসপ্রাপ্ত সম্পদ (জমি, শ্রম, মাটির স্বাস্থ্য, পানি) এবং জলবায়ুর অস্থিতিশীলতা (যেমন- খরা, লবণাক্ততা, বন্যা, তাপ এবং ঠান্ডা) বিবেচনায় রেখে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদন একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথেই সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।  

লেখক:ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
ফার্ম মেশিনারি এন্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
গাজীপুর-১৭১০।
Email: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.