মা-জীবনের চিরন্তন আশ্রয়স্থল

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

ড. রাখী চক্রবর্ত্তী:পৃথিবীতে আসার পর থেকে প্রতিনিয়ত এই মানুষটা আমাদের আগলে রাখেন, আমাদের জন্য সব দুঃখ কষ্ট হাসি মুখে মেনে নেন। কে এই মানুষটা?  মা। “মা” এই শব্দটির মতো এতো মধুর শব্দ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। এই শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া, মমতা, স্নেহ, আদর, ভালোবাসা। মা শাশ্বত, চিরন্তন একটি আশ্রয়ের নাম। প্রতিটি মায়ের সঙ্গে তার সন্তানের সম্পর্ক চিরন্তন। মায়ের সাথে সন্তানের অদৃশ্য একটা বন্ধন থাকে যে বন্ধনের জন্য মাকে কিছু বলে দিতে হয়না, সন্তানের সব ব্যাথা, সব কষ্ট মায়েরা বুঝতে পারেন। প্রতিটি মায়ের কাছে গল্পের সেই সোনার কাঠি রুপোর কাঠি থাকে যা দিয়ে সন্তানদের জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিতে পারেন।

মা আছেন বলেই আমাদের জীবনের গল্পগুলো এতো সুন্দর, এতো রঙিন। পৃথিবীর সব কিছুই পরিবর্তণশীল কিন্তু মায়ের কোনো বদল নাই পরিবর্তন নাই। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে মা এর সংজ্ঞা কি? আমি এক কথায় সহজভাবে বলবো পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ও আরামের জায়গার নাম মা। জীবনে চলার পথে যতুটুকু বুঝেছি দুঃখ-কষ্টে, সংকট-উত্থানে যে মানুষটির সান্তনা, স্নেহ, ভালোবাসা আমার সমস্ত দুঃখের অবসান ঘটায় সেই মানুষটিই হলো মা। প্রতিটি মানুষের জীবনে মা শব্দটির গুরুত্ব কতটুকু তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা কঠিন। মাকে কোনো শব্দ বা ভাষায় তুলনা করা যায় না কারণ মায়ের কোনো তুলনা চলে না, মায়ের তুলনা মা-ই।

পৃথিবী জুড়ে অনেক অনেক ভালোবাসার গল্প আছে এখন তেমনি একটি ভালোবাসার গল্প শোনাবো। গল্পটি চীনের পৌরাণিক গল্প থেকে নেয়া। গল্পটা এমন ‘এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি। প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে। মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিণ্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল ছেলেটি। হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের তাজা হৃৎপিণ্ডটা। ছেলেটি খুঁজে পেয়ে মায়ের হৃৎপিণ্ড হাতে নিল। তখনো ধক ধক করছে মায়ের হৃৎপিণ্ড। হাতে নিতেই তা বলে উঠল, ব্যথা পেলি খোকা?’ মায়ের ভালোবাসা এমনই হয়।
মা দিবসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা পোস্ট করি- মা, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। কিন্তু যাকে নিয়ে লিখছি সেই মা হয়তো জানেনি না যে তাঁর সন্তান তাঁকে কতটুকু ভালোবাসে। কারণ ওই মার তো অনলাইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই চলুন আমরা মাকে সামনাসামনি বলি- মা, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।

মা আমাদের সাহস, আমাদের শক্তি, আমাদের নির্ভরতা। আজ কাল পরশু যেদিনই হোক মা তো মা-ই। তাই শুধু মা দিবসে নয়, মায়ের জন্য আমাদের ভালোবাসা হোক প্রতিটি দিনের প্রতিটি মুহূর্তের, বছরের প্রতিটি দিন হোক মায়েদের জন্য। সর্বোপরি জীবনের সকল সম্পর্কগুলো সজীব থাকুক, অটুট থাকুক ভালোবাসা। পৃথিবীর সকল মায়েরা ভালো থাকুক, সকল মায়ের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা।

লেখক: সহযোগী প্রফেসর , ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি,  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ