গাড়ীর উচ্চ হর্ণে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রম ব্যাহত

আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি প্রতিনিধি:গাড়ির উচ্চ হর্ণ ও শব্দ দূষণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পাঠ কার্যক্রমে ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় থেকে কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ের কৃষি অনুষদীয় ভবন সংলগ্ন রাস্তায় যান চলাচলের শব্দে পাঠ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, ক্লাসের সময়ে গাড়ির শব্দ এবং উচ্চ হর্ণের কারণে পাঠ কার্যক্রমে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কৃষি অনুষদের চারটি বর্ষ, মার্স্টাস ও অনান্য অনুষদের ক্লাস মিলিয়ে প্রায় ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী এই কৃষি অনুষদীয় ভবনে ক্লাস করে থাকেন। আবার অনুষদের বেশিরভাগ ল্যাব ও শিক্ষকদের অফিস কক্ষও রয়েছে। কিন্তু ভবন সংলগ্ন সড়কটিতে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজারের অধিক যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহন চলার সময় তাদের গাড়ির ইঞ্জিন ও হর্ণের শব্দে পাঠে মনোযোগী হতে পারেন না বলে জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ শহরের ব্রীজ মোড় হতে সুতিয়াখালি, গফরগাঁও, পাগলা বাজার, ফসিলের মোড়, শেষ মোড়, বয়রা বাজারের যানগুলো এই সড়কে চলাচল করে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা, লেগুনা, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ক্যাম্পাসের ফসিলের মোড়-শেষ মোড় সড়কটি দীর্ঘ ৩ বছর ধরে সংস্কার র্কাক্রম চলার কারণে একরকম বাধ্য হয়েই কৃষি অনুষদীয় ভবন সংলগ্ন সড়কটি ব্যবহার করতে হচ্ছে চালকদের।

শব্দ দূষণের ক্লাসের ভোগান্তি নিয়ে কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সদস্য তারিক জামান জয় বলেন, কৃষি অনুষদ সংলগ্ন সড়কটি দিয়ে আগের থেকে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করছে। জব্বারের মোড় থেকে শেষ মোড় যাওয়ার রাস্তাটি অচল থাকায় দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী ট্রাক, সিএনজিসহ ভারী যানবাহনগুলো চলছে এই সড়কটি দিয়ে। আর এইসব যানবাহনের বিকট শব্দে ক্লাসে শিক্ষকের কথা আমরা ঠিকমত শুনতে পারি না। ক্লাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এবং বিশেষ করে কৃষি অনুষদ সংলগ্ন রাস্তায় যানবাহনের চলাচল সীমিতকরণ, উচ্চশব্দের যানবাহন চলাচল বন্ধ এবং গতিসীমা নির্দিষ্ট করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাক চালক জানান, ‘আসলে এই রাস্তাটি ব্যবহার ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই। বিকল্প রাস্তা যদি থাকত তাহলে আমরা সে রাস্তাটিই ব্যবহার করতাম। ট্রাক চললে শব্দ হবে, আর সে শব্দে শিক্ষার্থীদের কষ্ট হবে এটি খুবই সত্য কথা এটা আমরাও জানি। কিন্তু এই মুহুর্তে আমাদের যান চালানো ছাড়া কোন উপায় নেই।  

কৃষি অনুষদের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুখ বলেন, বাকৃবি ক্যাম্পাসের শব্দ দূষণের উপর আমরা একটি গবেষণা করেছিলাম সেখানে দেখেছি এখানে শব্দ দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। যেখানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবলের বেশি থাকা উচিত নয় সেখানে বাকৃবি ক্যাম্পাসে ৭২ থেকে ১০৫ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দের মাত্রা রেকর্ড করেছি। আর এই শব্দ দূষণের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগ হারানো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। গবেষণায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের উপর সাংঘাতিক রকমের খারাপ প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানান এই গবেষক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, ফসিলের মোড় থেকে শেষ মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কার্যক্রম চলায় কৃষি অনুষদীয় সড়কটি ব্যবহার করতে হচ্ছে চালকদের। সংস্কার চলমান রাস্তাটি মূলত ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত। আমরা সিটি কর্পোরেশনকে বেশ কয়েকবার রাস্তাটির সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার কথা বললেও তারা এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। দ্রুতগতিতে রাস্তাটির সংস্কার করার জন্য আমরা তাদেরকে আবারও জানাবো। এ রাস্তাটি চলাচললের উপযুক্ত হলে শিক্ষার্থীদের আর ভোগান্তি থাকবে না আমার বিশ্বাস।