ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ- বাঙালী জাতির স্বাধীনতার মূলমন্ত্র

Category: কৃষিবিদ ও ক্যাম্পাস Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম থেকেই ৭ মার্চকে ঘিরে বাঙালিরা টগবগে, প্রাণোচ্ছল হতে থাকে আর অন্যদিকে পাকিস্তানিরা হতে থাকে ভীত-উৎকণ্ঠিত। বিশ্ব মিডিয়ারও অন্যতম বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল ৭ মার্চ ১৯৭১। পুরো রেসকোর্স ময়দান সকাল থেকেই পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। সেইসঙ্গে ‘আপোস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আমার দেশ তোমার দেশ-বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘পরিষদ না রাজপথ-রাজপথ রাজপথ’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলদেশ স্বাধীন কর’, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ ইত্যাদি মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল পুরো এলাকা।

বিকাল সোয়া তিনটার দিকে বঙ্গবন্ধু বীরদর্পে ধীরে ধীরে মঞ্চে উঠলেন। তারপর শুরু করলেন অগ্নিস্ফূলিঙ্গ ছড়ানো সেই অলিখিত ভাষণ। ১১০৮টি শব্দ চয়নে উনিশ মিনিটের সেই ভাষণে তিনি যে অমর গাঁথা সৃষ্টি করেছিলেন, তার প্রজ্জ্বলিত শিখার আলোতেই অর্জিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা। এই ভাষণ ছিল বাহুল্যবর্জিত, শব্দ চয়নে ও বাক্যের বাঁধনে সহজবোধ্য এবং বাচনভঙ্গিতে সাবলীল। প্রয়োজনানুসারে বজ্রনিনাদের আওয়াজ ও জ্বালাময়ী সেই ভাষণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শরীরী ভাষা ছিল অত্যšত সামঞ্জস্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের মাধ্যমে বাঙালির মাঝে জাগ্রত করেছেন মুক্তির চেতনাকে।

পাকিস্তানি জেনারেল কামাল মতিনউদ্দীন তার ‘‘দ্য ট্র্যাজেডি অফ ওয়ার’’ বইতে লিখেছেন, ‘যেকোনো দিক থেকেই ৭ মার্চ ছিল মুজিবের দিন। তাঁর কণ্ঠে ছিল প্রচন্ড আবেগ। পুরো পরিস্থিতি ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। তাঁর কণ্ঠের দৃঢ়তায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। তাঁর পুরো বক্তব্যে এতটাই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল, মনে হয় সেদিন গাছ-পাথরও আন্দোলিত হয়েছিল। জনগণের প্রাণচাঞ্চল্য ছিল উদ্দীপনাময়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১-এর ৭ মার্চই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়।’

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি ইতোমধ্যে বিশ্বের চল্লিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। জ্যাকব এফ ফিল্ড সম্পাদিত লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইংরেজিতে অনূদিত ভাষণের বই ‘‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস: দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্টরি’’ তে ‘‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ দ্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’’ শিরোনামে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ এবং বিশ্বের সেরা দশ ভাষণের একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। ইউনস্কেো ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণকে 'বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং 'মেমোরি অব দ্য ও ওর্য়াল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিষ্টার' এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।

৭ মার্চের ভাষণটি বাঙালী জাতির মাঝে বেঁচে থাকবে রাজনীতির কবি রচিত রাজনৈতিক মহাকাব্য হিসেবে। আর এই মহাকাব্যের আবেদন কখনোই শেষ হয়ে যাবে না বাঙালির জীবনে। এই মহাকাব্যের ওপর ভর করেই এসেছে স্বাধীনতা, আমাদের বিজয়। অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ সম্মুখপানে, জননেত্রী শেখ হাসিনার যাদুকরী নেতৃত্বে জাতির জনকের স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়কি ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করে এগিয়ে যাবে আরও বহুদূর-এটাই বাকৃবি নীল দলের  প্রত্যাশা, যেখানে সার্বিক প্রেরণা হয়ে কাজ করবে ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণ।