টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিফ ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্ব অনেক-ড. এহসান

Category: বিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রি Written by agrilife24

রাজধানী প্রতিনিধি:বর্তমান বিশ্বে সর্বোচ্চ গরুর মাংস উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল এবং চীন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় আমাদের দেশেও রয়েছে গরুর মাংসের ব্যাপক চাহিদা। বিশ্বব্যাপী গরুর মাংস সবচেয়ে দামি এবং সুস্বাদু মাংস হিসেবে বিবেচিত। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিফ ইন্ডাস্ট্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

দুই দিনব্যাপী মেলার প্রথম দিন (৬জানুয়ারী) বিকাল তিনটায় "Huge Potential of Beef Cattle Industry in Bangladesh"-শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ এহসানুর রহমান এসব তথ্য তুলে ধরেন।  

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) জনাব মোঃ আজহারুল ইসলাম খান। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা. মোঃ জহিরুল ইসলাম।

ড. এহসান বলেন, গরুর মাংস প্রানিজ আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে কারণ গরুর মাংসে রয়েছে আমিষ আয়রন জিংক ভিটামিন বি টুয়েল সহ মানব দেহের জন্য উপকারী নানা পুষ্টি উপাদান।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ২০২১-২২ সালে আমাদের দেশের গরুর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি এবং উৎপাদিত মাংসের বাৎসরিক প্রায় ৯৩ লক্ষ মেট্রিক টন। জিডিপিতে লাইভস্টক এর অবদান ১.৯০%। মাথাপিছু প্রতিদিন মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম ও প্রাপ্যতা রয়েছে প্রায় ১৪৮ গ্রাম। প্রায় ২০ শতাংশ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে লাইভস্টক সেক্টরে। কাজেই মাংস শিল্প বৃদ্ধির সাথে সাথে এর পাশাপাশি প্রসেসিং এবং ফারদার প্রসেসিং শিল্প বৃদ্ধি পাবে সে হিসেবে দেশে বিফ ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরে ব্যাপক কর্মসংস্থান-এর পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যায়ের অর্থনীতির বিকাশ লাভ করবে বলে মনে করেন তিনি।

ড. এহসান আরো বলেন, আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে গরুর মাংসের তৈরী নানা খাবার। নানা ধরনের কাবাব থেকে শুরু করে কলিজা সিঙ্গারা, সমুচা, সাতকরা গোশত, হালিম এর সাথে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে বিফ কালাভুনা আর তেহারী তো রয়েছেই। এছাড়া বিফ প্যাটিস, বার্গার, সসেস ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই ভোক্তাদের সুলভে নিরাপদ মাংস সরবরাহে টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, মাংসের জন্য গরু লালন পালন করা আমাদের দেশে সহজ বলা চলে। কারণ এরা প্রচলিত এবং অপ্রচলিত শস্য উপজাত ও দানাদার খাদ্য খেয়ে মানুষের জন্য মাংস উৎপাদন করে থাকে। এদের খাদ্য ও বাসস্থান স্বাস্থ্য ও রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ দুগ্ধ উৎপাদনকারী গরুর তুলনায়।  তিন মাস থেকে এক বছরের মধ্যে মোটাতাজা করার মাধ্যমে মুনাফা ঘরে তুলতে পারেন উদ্যোক্তারা।



এখন আমাদেরকে এখন ভাবতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে নিরাপদ উপায়ে কিভাবে অধিক মাংস উৎপাদন করা যায়। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি উপজাত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুফল এবং পরিবেশন দূষণ রোধে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন ড. এহসান।

বিশেষজ্ঞ বক্তা আরো বলেন, প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলে উপজাতগুলি ইকোনমিক ভ্যালু অর্থনীতিতে যুক্ত হবে।অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই গবেষক। বর্তমান সময়ের জ্বালানি শিল্পেও ক্যাটেল ইন্ডাস্ট্রি খামার থেকে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে জ্বালানি শিল্পেও অবদান রাখা সম্ভব হলে মনে করেন তিনি। সব মিলিয়ে একটি অপার সম্ভাবনা দেখা দিবে এ শিল্পে এজন্য তিনি বিজ্ঞানসম্মতভাবে খামার করার পরামর্শ দেন।

আমাদের দেশে মাংস শিল্পে রয়েছে অপার সম্ভাবনা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিফ শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। মাংস শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করে এখন সময় এসেছে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে টেকসই ভাবে দেশের বিফ ইন্ডাস্ট্রি কে টেকসই ভাবে তৈরি করা। আমাদের সাস্টেইনেবল গোল নিশ্চিত করতে হলে পুষ্টি নিরাপত্তা প্রয়োজন আর পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য প্রাণিজ আমিষ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য।