ডিম ও মুরগির মাংসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এখনই বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে

রাজধানী প্রতিনিধি:নিম্ন আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের বড় উৎস ডিম এবং মুরগির মাংসের বাজার মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এখনই বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে; না হলে গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। দেশে প্রাণীজ খাতের বিভিন্ন পুষ্টিপণ্য, ঔষধ, ভ্যাকসিন, ইত্যাদি আমদানী করে পোল্ট্রি শিল্পকে দিনদিন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশের এনিম্যাল হেলথ্ কোম্পানীগুলো। তবে এনিম্যাল হেলথ্ পণ্য আমদানীতে এখন এলসি খুলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে এ খাতের আমদানীকারকদের।

বুধবার (২৫ মে) রাজধানীর এক অভিজাত রেস্টুরেন্টে দেশের পোল্ট্রি, ডেইরি এবং ফিস ইন্ডাস্ট্রিজে কর্মরত মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত একমত বিনিময় সভায় আক্ষেপের সুরে এমন অনুভূতি তুলে ধরলেন ডক্টর’স এগ্রোভেট লিমিটেড-এর কর্ণধারগণ।

জানা যায়,সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। রপ্তানি আয় বাড়লেও পরিমাণে যেভাবে রপ্তানি বেড়েছে সেভাবে আয় বাড়েনি। চাহিদার বিপরীতে ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব ধরনের পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও শিশুখাদ্য, জ্বালানি তেল, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, উৎপাদনমুখী স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, কৃষি খাত সংশিষ্ট পণ্য এবং সরকারি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প ব্যবহারের জন্য আমদানি করা পণ্যে এলসি মার্জিন হবে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে।

ডক্টর’স এগ্রোভেট লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. রাফিউল করিম বলেন, প্রাণীজ খাতের বিভিন্ন পুষ্টিপণ্য, ঔষধ, ভ্যাকসিন ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যা দেশের সিংহভাগ ফিড মিল, হ্যাচারি, ব্রিডার ফার্মসহ বাণিজ্যিক লেয়ার এবং ব্রয়লার খামারের চাহিদা মিটানো হয়। বিগত করোনার সময়ে শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তারা এসব পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছিল। তবে বর্তমান সময়ে এগুলো আমদানিতে এলসি মার্জিনে কড়াকড়ি আরোপ করায় হিমসিম খাচ্ছেন এ খাতের আমদানিকারকরা। প্রাণিসম্পদের এসব পণ্য কৃষি পণ্য হিসেবে বিবেচনা না করায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ডা. রাফি।

ডক্টর’র এগ্রোভেট এর পরিচালক ডা. তুষার চৌধুরী বলেন, দেশের কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য সবকিছুকে ঘিরেই আমাদের কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ। এসব বিষয়গুলি ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের আমলে না নিলে অচিরেই এনিম্যাল হেলথ্ পণ্য আমদানীদতে বিঘ্ন ঘটবে। ফলে প্রাণিসম্পদের সকল ক্ষেত্রেই সাপ্লাই চেইন ভেঙ্গে পড়ার আশংকা করছেন তারা।



সম্প্রতি একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড: জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ডিম এবং মুরগির মাংসের দাম যাতে বেশি না বাড়ে এবং ভোক্তারা যাতে এটা বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে সরকারকে সেই ধরনের নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। বিগত দুই বছরের উদাহরণ টেনে বলেন এ সময় ছোট খামারি যারা আছে তারা টিকে থাকতে পারে নি। তারা উৎপাদনের বাহিরে চলে গেছে কাজেই তাদেরকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হলে সরাসরি তাদের/খামারিদের প্রণোদনা দিতে হবে এবং এটি চলতি বাজেটের মধ্যে সংযুক্ত করার কথা বলেন বিশিষ্ট এই কৃষি অর্থনীতিবিদ। এছাড়া সব ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্স প্রত্যাহারের কথা যোগ করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ জনাব ড. জাহাঙ্গীর আলম।

সংকট সমাধানে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা, এলসি মার্জিন শিথিল, পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরি খাদ্য তৈরির কাঁচামাল ও পুষি্ সামগ্রী আমদানিতে আগাম কর, উৎসে কর, ভ্যাটসহ সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারসহ পোল্ট্রিবান্ধব নীতি সহায়তা চেয়েছেন উদ্যোক্তারা।