বিজ্ঞানভিত্তিক ও তথ্য নির্ভর কৃষি প্রতিবেদন উপর গুরুত্ব আরোপ করেন বিশেষজ্ঞগণ

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য (এসজিডি) অর্জনে এবং কৃষি উদ্ভাবনকে কার্যকরভাবে ব্যবহারে প্রান্তিক কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রমাণ-ভিত্তিক কৃষি সংবাদ প্রচারে রংপুর বিভাগের গণমাধ্যমকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) অনলাইন মাধ্যম জুমে ২৫ এবং ২৬ জানুয়ারি, দুইদিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এই  অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ২৫ জনেরও বেশি সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

"কৃষি বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি" শিরোনামের অনুষ্ঠানটিতে কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যেমন- কৃষিতে জীবপ্রযুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন কি প্রভাব রাখে সে বিষয় মতবিনিময় করা হয়। দুইদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সেশনে জীবপ্রযুক্তি, বায়োসেফটি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগন এই প্রশিক্ষন কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন যারা বিভিন্ন সেশনে প্যানেলিস্ট হিসাবে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণকারীদের সাথে কৃষিতে জীবপ্রযুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, জিনোম সম্পাদনা, বিজ্ঞান-ভিত্তিক উদ্ভাবন এবং কৃষিশিক্ষার অন্যান্য দিক সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেন। প্রশিক্ষণটি কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে প্রথিতযশা সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মতবিনিময় করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। ফলে অংশগ্রহনকারীদের সাথে বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যার ফলস্বরূপ আলোচ্য বিষয়ে অংশগ্রহনকারী  সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে উপস্থিত সবাই আশা প্রকাশ করেন।    

ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ এর সিইও এবং নির্বাহী পরিচালক মোঃ আরিফ হোসেন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এবং বলেন, "গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকগণ আধুনিক কৃষি-প্রযুক্তি ও  উদ্ভাবনের তথ্য প্রচার এবং সম্প্রসারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যম,  গণযোগাযোগ কর্মী, এবং সাংবাদিক এই সবার মধ্যে একটি সেতু বন্ধন তৈরি করা যেতে পারে, এর মাধ্যমে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যাবহার এবং প্রসার নিশ্চিত করা সম্ভব"। তিনি আরো বলেন, "বিজ্ঞানভিত্তিক-তথ্য নির্ভর প্রতিবেদন কৃষক এবং ভোক্তাদের জন্য উপকারী হতে পারে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য সক্ষম পরিবেশ উন্নত করতে আমাদের সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত"।

“কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ও আধুনিকীকরণ পুরো কৃষি ব্যবস্থাকে বদলে দেবে। কৃষিতে আধুনিকায়নের ফলে,  বাংলাদেশে অনেক তরুণ-উদ্যমী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে । কিন্তু বাজার ব্যাবস্থা থেকে শুরু করে,  বিপণন ব্যাবস্থা, এবং উৎপাদক ও বিক্রেতাদের মধ্যে তথ্য-যোগাযোগের ঘাটতির ফলে এই সকল ফসলের বাণিজ্যিকীকরণের জন্য একটি সয়াহক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। তাই, কৃষিকে একটি লাভজনক উদ্যোগ হিসেবে তৈরি করতে এই সমস্যার আশু সমাধান দরকার। এর ফলে কৃষিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তি ঘটবে।” বলছিলেন বলেন কৃষি মন্ত্রনালয়ের এনুয়াল পারফর্মেন্স এক্সপার্ট পুলের সদস্য কৃষিবিদ হামিদুর রহমান।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডঃ জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “সীমিত সম্পদ এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে আমাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রয়োজ; সাথে সাথে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে । আধুনিক জিবপ্রজুক্তি ফসলকে তার পুষ্টির মান অক্ষুণ্ন রেখে মানুষের পুষ্টিমান উন্নয়ন করতে সয়াহক ভূমিকা পালন করে।‘’

ডাঃ মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম, ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসএমএমইউ-এর অধ্যাপক ও পরিচালক, কৃষি উন্নয়নের আলোকে সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব এড়ানোর উপর জোর দেন। তিনি বলেন, "জীবপ্রযুক্তি’র অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, এবং এই সংক্রান্ত গবেষণা এবং উদ্ভাবনে আরও বেশি বিনিয়োগ করা উচিত, যাতে আমরা ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের নিজস্ব সক্ষমতার বিকাশ করতে পারি’’ ।

"সাংবাদিকরা কৃষির অগ্রগতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং দায়িত্বশীল রিপোর্টিং একটি নিত্যদিনের কাজের মধ্যে পড়ে, অভ্যাসে পরিণত করতে হবে । সাথে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেষণে আরো সতর্ক এবং যত্নবান হতে হবে। গণমাধ্যমকে কৃষি’র উত্তোরতর উদ্ভাবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।"  বলেন ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক, জনাব রিয়াজ আহমেদ।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিয়ময় করেন এবং মফস্বল সাংবাদিকতার নানান সমস্যা তুলে ধরেন।  তারা তথ্য-ভিত্তিক প্রতিবেদনের তৈরি করার প্রয়োজনীতার উপর আলোচনা করেন এবং তাদের প্রতিবেদনগুলো আরো তথ্যনির্ভর করবেন বলে প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।

এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর  সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ড. আহমদ সালাহউদ্দিন এবং বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার এম. আব্দুল মমিন পুষ্টি সমৃদ্ধ চালের গুরুত্ব নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন ।

ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) সামাজিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা উন্নয়েনে নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান যার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরনে কৃষিখাতে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার সহজলভ্য করা যার মধ্যে শস্য উৎপাদনে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার অন্যতম। বাংলাদেশ ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায়, যুক্তরাষ্টের অ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স, কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একযোগে কাজ করছে। এফএফবি বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিদের কৃষিখাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত করছে, যারা সমন্বিতভাবে খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও জীবনমান উন্নয়নে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।