‘তুর্কী আপা’ যেন বেগম রোকেয়ারই প্রতিচ্ছবি

Category: সমসাময়িক Written by agrilife24

কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ:মোছাঃ আফেলাতুন নেছা। সবার কাছে তিনি “তুর্কী আপা” হিসেবেই সুপরিচিত। কৈশোরে জীবনের সংজ্ঞা না বুঝেতেই শুরু করতে হয়েছিল জীবন সংসার। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন একজন মানুষ হিসেবে। হাত বাড়িয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের উন্নয়নের জন্য। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য বিশেষ করে নারীদের জন্য তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ। তার এই সব কর্মের কারণে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল তাকে “তুর্কি” উপাধি প্রদান করেন। তিনি ২০২১সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখান।

নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত-বয়তুল আলী প্রামানিক ও মাতা: খাতেজান বেওয়ার একটি সাধারন পরিবারে ০২ ফেব্রুয়ারী/১৯৫৫ইং জন্ম গ্রহন করেন মোছাঃ আফেলাতুন নেছা। আফেলাতুন বলেন, শৈশব থেকেই তিনি সাহসী-উদ্যোগী ও পরোপকারী স্বভাবের জন্য সকলে তাকে তারুন্যের প্রতিক উদ্যোমী নেত্রী বলে ডাকেন। ১৯৬৪ সালে সদর উপজেলার চকউজির সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনীতে বৃত্তি প্রাপ্ত হন। পড়াশোনার আগ্রহের কারণে বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে একটি ছোট নদী পাড় হওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় তিনি সাঁতার দিয়ে নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেছেন। তিনি ১৯৭০ সালে এসএসসি পাশ করেন।

পারিবারিক রীতি অনুসরণ করে তার বড় বাবার উদ্যোগে সদর উপজেলার ০৭ নং বোয়ালিয়া ইউনিয়নের দোগাছী গ্রামের বাংলাদেশ রেলকর্মচারী তুমিজ উদ্দিনের সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৩-১৯৭৮ইং সালে যুদ্ধবিধস্থ দেশে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ৩নং আসনের নারী সদস্য মনোনিত করা হয়। একজন নারী সদস্য হিসাবে প্রান্তিক জনগনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি বোধ থেকে তিনি এলাকার হত-দরিদ্র মানুষদের সাহায্য ও সহায়তা, তাদের জীবন মানের উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত মানুষের জন্য অধিকার আদায়ের নিরন্তর সংগ্রাম শুরু করেন। এরপর ১৯৮৪-১৯৮৯, ১৯৯৬-২০০১, ২০০১-২০০৮ এবং ২০১৬-২০২১ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

২০১১সাল থেকে তিনি অপরাজিতা প্রকল্পে যুক্ত হন এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, রাস্তা-ঘাট ব্রীজ-কালভাট নির্মান, নারীর আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে এলাকার মানুষের মুখে-মুখে সুনাম ছড়াতে থাকেন। ২০১৯ সাল থেকে অপরাজিতা প্রকল্পের উৎসাহে নিজেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করার লক্ষে নিজেকে গোছাতে থাকেন এবং ২০২১ সালে ১১নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলার ৭নং বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়ে দলের সভাপতি বরাবর আবেদন করেন এবং মন্ত্রী-এমপি এর সুপারিশ প্রাপ্ত পুরুষ প্রার্থিকে পিছনে ফেলে ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে সদর উপজেলার সর্বোচ্চ বেশী ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

তিনি সদর উপজেলার আওয়ামী মহিলালীগের সভাপতি হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে মহিলা আওয়ামীলীগ পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে গিয়ে দুই হাজারের অধিক নারীকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেছেন এবং আটশতাধিক নারীকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহায়তায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মুল কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করেছেন।

ভোর-সকাল থেকে সন্ধ্যা-রাত পর্যন্ত পায়ে হেটে ছুটে চলেছেন সকলের প্রিয় “তুকী আপা” মানুষের দ্বারে দ্বারে। নিজে থেকেই খোঁজ নিচ্ছেন এলাকার মানুষের সুখ-দু:খ ও কার কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধান করে দিচ্ছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন সমতার সমাজ শীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে নারী-পুরুষ সমান আত্ম-বিকাশের সুযোগ পাবে। চলমান পুরুষতান্ত্রিকতার পরিবর্তে গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক নতুন সমাজ ব্যবস্থা।