মোহাম্মদপুরে পার্ক উদ্বোধন এবং ডিএনসিসি বনাম ভারতীয় দূতাবাসের মধ্যে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি: আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে উদয়াচল পার্ক ও খেলার মাঠ উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন শেষে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) বনাম বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের মধ্যে এক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনকালে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী। খেলা-পাগল তাঁর পরিবার। তাঁদের কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় মাঠ ও পার্ক উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এই পার্কটি তারই ধারাবাহিকতা।

মেয়র শৈশবের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “আমরা যখন ছোট ছিলাম, ক্রিকেট খেলার জন্য আশেপাশের ঘরে-ঘরে গিয়ে চাঁদা তুলে ব্যাট কিনেছি, প্যাড কিনেছি। তখন আমাদের জন্য একটি ব্যাট, একটি প্যাড অনেক টাকা, অনেক দাম ছিল। তবে তখন এক ধরনের সামাজিক বন্ধন ছিল। এই সামাজিক বন্ধন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন একটি অ্যাপার্টমেন্টে, চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে গিয়েছি। আমাদের সামাজিকতা কমে যাচ্ছে। ভালোবাসার বন্ধন কমে যাচ্ছে। আমাদের সামাজিক বন্ধন আরো দৃঢ় করতে হবে। আমরা যেন পাড়া উৎসব করতে পারি, খেলাধুলা করতে পারি। এর মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এজন্য আমি এই মাঠটি এই এলাকার জনগণকে দিতে চাই। এখানে ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এসে খেলতে পারবেন। এই মাঠ সকলের।

আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, ঢাকা শহরকে উন্নয়ন করতে হবে - এটা আমাদের সকলের প্রত্যাশা। কিন্তু যেখানেই হাত দিচ্ছি, সেখানেই অবৈধ দখলদারকে দেখতে পাচ্ছি। খাল, মার্কেট, রাস্তাঘাট, মাঠ সর্বত্র অবৈধ দখলদার। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদেরকে সুন্দর খেলার মাঠ, সুন্দর খাল, রাস্তাঘাট রেখে যেতে হবে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা”।

মেয়র বলেন, “ডিএনসিসির থেকে দশটি ক্রিকেট খেলার মাঠ আমরা করে দিচ্ছি। কিছু কিছু মাঠ আন্তর্জাতিক মানের হবে। মাঠে ক্রিকেটের পাশাপাশি অন্যান্য খেলাধুলাও করা যাবে। এই মাঠে বর্ষায় যাতে খেলা যায়, এজন্য পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে; ব্যায়ামাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর করাই আমাদের লক্ষ্য”।

মেয়র আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের প্রাণ দিতে হবে না, খেলার-মাঠ যেন আমরা দখল না করি, খাল যেন ময়লা না করি, যেন অবৈধভাবে দখল না করি। মোহাম্মদপুরে মোট আটটি মাঠ হবে। ডিএনসিসির কোথাও খাস জমি থাকলে সেখানে খেলার মাঠ তৈরি করা হবে। যত বেশি খেলার মাঠ হবে, আমাদের শিশুরাও তত বেশি খেলতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ সাদেক খান এমপি বক্তব্য রাখেন। এছাড়া স্থপতি ইকবাল হাবিব, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শাহীন আক্তার সাথী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে ডিএনসিসি বনাম ভারতীয় হাইকমিশনের মধ্যে উদয়াচল মাঠে এক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। টুয়েন্টি-টুয়েন্টি এই ম্যাচে ডিএনসিসি ১৭২ রানে ভারতীয় হাইকমিশনকে হারায়। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ডিএনসিসি ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০০ রান করে। ডিএনসিসি দলের ইমন ১০৫ রান এবং আল আমিন ১০১ রান করে। জবাবে ভারতীয় হাইকমিশন ১৩ ওভার ব্যাট করে ১২৮ রান করে অল আউট হয়ে যায়।

উদয়াচল পার্ক ও খেলার মাঠ সম্পর্কে কিছু তথ্য

নগরবাসীর সামাজিক ও সংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ, বসবাস উপযোগী, কার্যকর ও টেকসই অবকাঠামো নির্মানের মাধ্যমে পরিবেশ উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে “ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন উন্নয়ন ও সবুজায়ন” শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সালে হাতে নেয়া হয়। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যয় ২৭৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। যার সংশোধিত/প্রস্তাবিত ব্যয় ২০৬ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। প্রকল্পটি জুন-২০২১ মাসে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায়,
ক) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৮টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন;
খ) ২৩টি বিদ্যমান পাবলিক টয়লেট উন্নয়ন এবং আধুনিক, স্বাস্থ্যসম্মত ও ব্যবহার উপযোগী নতুন ৫০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ;
গ) পর্যাপ্ত খোলা এবং সবুজ স্থান রেখে ২টি কবরস্থান উন্নয়নসহ অন্যান্য কাজ বাস্তবায়নাধীন আছে।

প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৪টি পার্ক ও ১টি খেলার মাঠ এবং ২৭টি পাবলিক টয়লেটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে উদয়াচল পার্ক ও খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজ শেষে আজ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।

পার্কটির উন্নয়ন কাজের সংক্ষিপ্ত তথ্যাদি
১। কাজের নাম        :    মোহাম্মদপুর উদয়াচল পার্ক ও খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজ।
২। পার্কের আয়তন    :    ১.২১৪ একর
৩। প্রাক্কলিত ব্যয়        :    ৪.৬০ কোটি টাকা (প্রায়)
৪। চুক্তি মূল্য        :    ৪.৪০ কোটি টাকা (প্রায়)
৫। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান    :    ভিত্তি-ডিপিএম জেভি
৬। ঠিকাদার        :    মেসার্স পিএফ কর্পোরেশন
৭। কাজ শুরুর তারিখ    :    ০১/১২/২০১৯ খ্রি.
৮। কাজ সমাপ্ত        :    ৩১/০১/২০২১ খ্রি.
৯। কাজের প্রধান অঙ্গ    :    
ক) সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত খেলার মাঠ;
খ) মাঠের ভিতর আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা;
গ) উন্নত মানের ক্রিকেট পিচ;
ঘ) পার্কের চতুর্দিকে প্রশস্থ হাঁটার পথ;
ঙ) মাঠের চতুর্দিকে নিরাপত্তামূলক ফেন্সিং ব্যবস্থা;
চ) ইউরোপিয়ান ব্রান্ডের লাইটিংসহ নিরাপত্তা ক্যামেরা;
ছ) ছোট বাচ্চাদের জন্য পৃথক খেলাধুলার ব্যবস্থা;
জ) আধুনিক পাবলিক টয়লেট ব্যবস্থা, পুরুষ, মহিলা ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে;
ঝ) পার্কটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি কো-ম্যানেজমেন্ট অফিস নির্মাণ করা হয়েছে।