একটি সেতু ও হাজারো মানুষের স্বপ্ন পূরণ

Category: ফোকাস Written by agrilife24

ইমরুল কায়েস মির্জা কিরণ:মাত্র ৮২ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার যথাক্রমে নাকাই ইউনিয়ন ও পবনাপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নলেয়া খালের উপর নির্মিত এ সেতু বদলে দিয়েছে দুই পাড়ের হাজারো মানুষের জীবনচিত্র।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে নির্মিত হয় এই বড় আকারের হাইড্রোলিক স্ট্রাকচারটি। এরপর থেকে এ সেতুর সাথে যুক্ত হয়েছে দুই উপজেলার দুটি সীমানাবর্তী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম। এতে উপকারভোগী গ্রামগুলোর মানুষ বেশ খুশি।

এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার দরুন মধ্যস্বত্বভোগীরা মাঠে গিয়ে বাজারদরের তুলনায় কম দামে কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করত। পরিবহন সমস্যার কারনে ধানের মূল্য মণ প্রতি ৭০-১০০ টাকা কম পেত সংশ্লিষ্ট গ্রামের কৃষক। নলেয়া খালের ওপর বিএডিসি কর্তৃক নির্মিত এ সেতুর বদৌলতে এখন কৃষকরা নিজেরাই তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন। ফলে তারা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। জমির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।



শুধু কৃষি পণ্য নয়, প্রতিদিন শত শত শিশু এ খালের উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত ঝুকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে স্কুলে যাতায়ত করতো। এ সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করতে পারতো না কোন রিক্সা-ভ্যান এমনকি বাইসাইকেলও। অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতো বহু পথ ঘুরে ঘুরে জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়ে। তাছাড়া বছরের অধিকাংশ সময়ই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তো এলাকাবাসীর নির্মিত বাঁশের সেই ঝুকিপূর্ণ সেতু।

এলাকাবাসী জানায়, দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নের সীমানায় হওয়ায় ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি কেউ, সব সময় অবহেলিত ছিল এই এলাকা। জনপ্রতিনিধিরা বছরের পর বছর ধরে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি সরকারী অনেক দপ্তরের লোকজন প্রতি বছর এসে পরিমাপ করে গেলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি আমাদের।

অবশেষে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর করে বিএডিসি। অবহেলিত এই এলাকার জনগণ ব্রীজটি পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিএডিসি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি।

বিএডিসি’র বগুড়া সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী এস এম শহীদুল আলম বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘব করা এবং কৃষি পণ্য সহজে বাজারজাত করে কৃষকরা যাতে তাদের উৎপদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় এসব দিক বিবেচনা করে বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ ব্রীজটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।



এছাড়া এই ব্রীজটির নীচ দিয়ে প্রবাহিত নলেয়া খালটিও এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পুনঃখনন করা হয়। এতে জলাবদ্ধতা নিরসনের ফলে হাজার হাজার একর একর জমির ফসল কৃষকরা নির্বিঘ্নে ঘরে উঠাতে পারছে। পাশাপাশি শুকনো মৌসুমে খালের পানি ব্যবহার করে সেচকার্য পরিচালনা করার মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।