নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন: স্টেকহোল্ডাররা কে কি বলছেন?

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বর্তমানে আমাদের দেশের জন্য বড় একটি চ্যালেন্জ।  এ চ্যালেন্জ মোকাবেলায় সরকারী এবং বেসরকারি পর্যায়ে নানারকম কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব কার্যক্রমগুলোকে টেকসই করতে প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত এবং নীতিমালা সেই লক্ষ্যে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সরকারী এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরই আলোকে রাজধানীতে ৩ দিন ব্যাপী শুরু হওয়া "Food Safety and AMR Surveillance of Food of Animal Origin:" শীর্ষক কর্মশালার আজ দ্বিতীয় দিনে অংশগ্রহনকারীরা আয়োজিত টপিকের উপর মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করলেন।

জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) আয়োজিত নিরাপদ খাদ্য ও এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার শীর্ষক তিন দিনব্যাপি কর্মশালার প্রথম সেশনে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের ৩ টি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। অংশগ্রহণকারীগণ নিম্নোক্ত শিরোনামে "Coordination in Food Safety Regulatory Enforcement, "Effective Food Safety System in Supply Chains", "Food Safety Capacity Building Efforts" আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।

ড. জন উডফোর্ড এবং ড. মেহেদী হাসানের পরিচালনায় "Coordination in Food Safety Regulatory Enforcement" শীর্ষক শিরোনামে ও কৃষিবিদ ড. এস এম রাজিউর রহমান এবং মাইকেল ব্যারি-এর পরিচালনায় "Effective Food Safety System in Supply Chain" এবং ড. মোহাম্মদ আইনুল হক, ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং ডা. গ্যাবর মোলনারের পরিচালনায় "Food Safety Capacity Building Efforts" শীর্ষক শিরোনামে অংশগ্রহনকারীগণ আলোচনায় অংশ নেন।

ইউনিডো পরামর্শক জনাব মো: আবু আবদুল্লাহ বলেন, অংশগ্রহণকারীগণ দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বিদ্যমান উপাদান সমুহ, তাদের সক্ষমতা এবং প্রায়োগিক দিক নিয়ে করণীয়সমুহ নিয়ে সুপারিশমালা তুলে ধরেন। অংশগ্রহণকারী Poultry &  Dairy Industry, খামারী এবং ব্যবসায়ী সকলেই মনে করেন UNIDO-LDDP এর যৌথ উদ্যোগে আজকে কর্মশালাটি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বিপননে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

নিরাপদ খাদ্য ইস্যুটি কেবল বাংলাদেশে নয় সমগ্র বিশ্বে আজ আলোচিত একটি বিষয়। আমাদের খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে গুনগত মান সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিরাপদ দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, প্রানিজ প্রোটিন সরবরাহ জরুরি। সকল অংশীজনের সচেতনতাই এ ধরনের উদ্যোগকে সফল করতে পারে বলে মনে করেন ডিএলএস এর পরিচালক জনাব ড. আবু সুফিয়ান। ২০৪১ সালে যদি আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পৌঁছাতে চাই সেক্ষেত্রে এমন কর্মশালা অত্যন্ত গুরুত্ববহন করে  বলে জানান ডিএলএস এর উপপরিচালক জনাব ডা. শেখ শাহিনূর ইসলাম



এলডিডিপি- ডিএলএস এর এনিমেল হেলথ এক্সপার্ট ডা. অরবিন্দ কুমার সাহা বলেন Multi stakeholder Workshop থেকে অস্পষ্ট অনেক বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সংগ্রহ ও সমষ্টিকরনের সুযোগ পাওয়া যায়।

নিরাপদ প্রানীজ প্রোটিন উৎপাদনে আমরা শুধুমাত্র উৎপাদনকারীদের উপর দোষারোপ করি ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়! খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সকলেরই দায় রয়েছে। কাজেই সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এলডিডিপি এর কনসালটেন্ট জনাব ডা. আব্দুল হান্নান

দিনাজপুরের জেলা ভেটেরিনারি অফিসার ড. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, অসাধারণ একটি কর্মশালা। একই ছাতার তলে থেকে স্টেকহোল্ডারদের সচেতন করতে এ ধরনের কর্মশালার কোনো বিকল্প নেই।

স্টেকহোল্ডারদের সচেতন করা না গেলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন UNIDO এর কনসালট্যান্ট জনাব  ডা. গিয়াসউদ্দিন

প্যরাগন গ্রুপের ডেইরি, ফিশারিজ এবং ফার্টিলাইজার এর জেনারেল ম্যানেজার জনাব মো. হাসান মাহমুদ বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে সরকার, ডোনার এবং প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি বিনিময়ে বেশি বেশি কো-অর্ডিনেশন প্রয়োজন।

খাদ্য নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত করা না যায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে শুরু করে, আমদানি রফতানি সকল কিছু বাঁধাগ্রস্থ হবে বলে জানান District Fisheries Officer কৃষিবিদ সুজিত কুমার চ্যাটার্জী। One Feed এর জেনারেল ম্যানেজার জনাব নূর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পেশাগত জীবনে উন্নয়ন করার জন্য এই ধরনের কর্মশালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো) কনসালট্যান্ট কৃষিবিদ ড. এস. এম. রাজিউর রহমান বলেন, কর্মশালার উদ্দেশ্য হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেজন্য যে যে নিয়ামকগুলে দরকার লাইভস্টক সেক্টরে তার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য নিরাপত্তা সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা।



Animal Origin Food-এর সাপ্লাই চেইনকে ডেভলপ্ করতে হলে নিরাপদ উৎপাদন ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, উৎপাদিত পণ্য সঠিক পন্থায় সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য ট্রান্সপোর্টেশনের সময় কোয়ালিটি সংরক্ষণ করা ছাড়াও ভোক্তা পর্যায়ে পৌছানো পর্যন্ত যাতে গুনগত মান অক্ষুণ্ণ থাকে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করা গুনীজন ও অর্গানিক হাব-এর সিইও কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার

প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও ইউনিডো ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ডা. মো: আইনুল হক বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও ডিএলএস-এর মাধ্যমে গৃহীত এসকল উদ্যোগ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং এন্টিবায়োটিক মাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে তিনি।