দেশে প্রথমবারের মত ভার্টিক্যাল ফ্লোটিং বেড পদ্ধতি উদ্ভাবন

খসরু মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, সিকৃবি থেকেঃজনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি মোকাবেলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের হাওরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে বছরব্যাপী কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে উলম্ব ভাসমান খামারে (ভার্টিক্যাল ফ্লটিং বেড) একক স্থান হতে অধিক ফসল উৎপাদন করে ক্রম-হ্রাসমান ভূমির উপর চাপ কমানোর এক অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন এবং কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন এবং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী আসিফ আল রাযী নাবিল ও সাদিয়া আশরফি ফাইরুজ।

সদ্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল লালশাক চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তারা। আমাদের দেশে বছরের অর্ধেকটা সময়, বিশেষ করে বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি থাকে। ফলে জলাবদ্ধ জমিতে কোন কৃষিকাজ হয় না। সেসব এলাকায় উক্ত সময়টুকুতে কোন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ থাকে না। এ সময় জমিতে উৎপাদন না হওয়ায় কৃষকের লোকসানসহ ঘাটতি দেখা দেয় শাক-সবজি ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বন্যাক্রান্ত অঞ্চলে বদ্ধ পানির উপর কাঠামোটি ভাসিয়ে কৃষকরা অনায়াসেই চাষাবাদ করতে পারবেন এবং বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কাঠামোটি শুকনো অনাবাদি জমির উপর স্থাপন করে কৃষিকাজ সচল রাখতে সক্ষম হবেন। সম্পূর্ণরূপে অব্যবহার্য জলাবদ্ধ ভূমির উপর কাঠামোটি স্থাপন করে কয়েকটি উলম্ব স্তরে চাষাবাদ করার ফলে কম জায়গা ব্যবহার করে অধিক ফলন নিয়ে আসা যাবে যা গতানুগতিক চাষাবাদ পদ্ধতিতে পাওয়া অসম্ভব। সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য উপাদান দিয়ে তৈরি এই কাঠামোটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যাবে।

প্রযুক্তিটি সম্পর্কে গবেষকরা জানান, চট, বাঁশ, সিপিভিসি পাইপ এবং পানির ড্রাম ব্যবহার করে তারা একটি বিশেষ কাঠামো তৈরি করেন যাতে ৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২ ফুট প্রস্থের তিনটি উলম্ব স্তর রয়েছে। স্তরগুলি চার ইঞ্চি পুরুত্বের মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। প্রতিটি স্তরের মধ্যে দুই ফুট করে ফাঁকা যায়গা রাখা হয়েছে যাতে করে উৎপাদিত চারা গাছগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস পেতে পারে। পুরো কাঠামোটি তিনটি পানির ড্রাম ব্যবহার করে পানির উপরে ভাসানো হয়। প্রস্তুতকৃত স্তরগুলিতে যেকোনো ধরণের শাকজাতীয় উদ্ভিদ চাষ করা যাবে।

গবেষকরা আশা প্রকাশ করেন, এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে কৃষকরা অধিক ফলন ঘরে তুলতে পারবেন যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় এই প্রযুক্তি আমাদের দেশের জন্য খুবই উপযোগী। দেশের হাওরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে বছরব্যাপী কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে উদ্ভাবনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গবেষকরা।