BLS-এর নবম সাধারণ সভা ও নিরাপদ আমিষ তৈরিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির আয়োজনে নিরাপদ আমিষ তৈরিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার...

কৃষকের দ্বারে দ্বারে বারি উদ্ভাবিত দানা ফসল বিস্তার ঘটাতে হবে-মহাপরিচালক, বিএআরআই

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: নানামুখী ঔষুধী গুনাগুন সম্ভারে ভাতের বিকল্প হিসেবে অপ্রচলিত দানা জাতীয় শস্যে...

সংকটপ্রবণ এলাকায় ৩ লাখ মানুষের মাঝে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করছে ‘প্রবাহ’

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সম্প্রতি ‘প্রবাহ’-এর স্থাপন করা ছয়টি পরিশোধন প্ল্যান্টে...

সংরক্ষণশীল কৃষির চাষ ব্যবস্থাপনা

ড. মোহাম্মদ এরশাদুল হক: কনজারভেশন এগ্রিকালচার (সিএ) বা সংরক্ষণশীল কৃষি একটি সমন্বিত চাষ ব্যবস্...

কৃত্রিম প্রজননের পরিপূর্ণতায় "আস্থা-এআই লিকুইড"

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: দেশে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে ডেয়রি শিল্প একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। এজন...

 

প্রফেসর ড. মো: পারভেজ আনোয়ার:বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর পরই ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া (UPM) শিক্ষা-গবেষণায় আমার সেকেন্ড হোম I পিএইচডি এবং পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসাবে সেখানে আমার কেটেছে পাঁচ বছরেরও বেশি সময়। এই দীর্ঘ সময় UPM এবং মালয়েশিয়া থেকে অনেক কিছু দেখেছি, জেনেছি, শিখেছি আর নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি; পিএইচডি ডিগ্রী কে বাড়তি পাওনা হিসাবেই এখন মনে হয়। সবচেয়ে বেশি জেনেছি ঐ দেশের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা সিস্টেম এবং তার গুরুত্ব ও তাতে বিনিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধীনতা, শিক্ষকদের মর্যাদা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে জাতীয় রাঙ্কিং এ  শীর্ষস্থানে থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের মধ্যে শিক্ষা-গবেষণা নিয়ে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা; ফলশ্রুতিতে প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আন্তর্জাতিক রাংকিং এ এগিয়ে যাওয়া। উল্লেখ্য যে জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিবছর সরকার থেকে Research University ঘোষণা করে বিশেষ অনুদান দেয়া হয়। ফলে আন্তঃ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা সেখানে অত্যন্ত তীব্র। তবে নেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা বা কাদা ছুড়াছুড়ি। আবার অন্ত-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাও রয়েছে বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইনস্টিটিউট এর মধ্যে; যার রাঙ্কিং প্রতিবছর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করে। শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত করার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ফান্ড (অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক), অত্যাধুনিক ল্যাব সুবিধা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্স/সেমিনারে অংশ গ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত অনুদান, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর এবং Q1 ও Q2 জার্নাল এ প্রকাশনার জন্য বিশেষ প্রণোদনা ইত্যাদি। বছর শেষে ঐ বছরে প্রকাশিত আর্টিকেলের মোট ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে প্রতি শিক্ষকের জন্য রয়েছে বিশেষ ইনসেনটিভ।

পিএইচডি করাকালীন UPM-এর ২০১০ সালের ডেস্ক ক্যালেন্ডার হাতে পেয়ে আমার বিস্ময়টা আমি এখনো ভুলতে পারি না । সেই বছর ডেস্ক ক্যালেন্ডারের ১২ টি মাস বরাদ্দ ছিল ১২ জন শিক্ষকের জন্য; ২০০৯ সালে প্রকাশিত শিক্ষকদের সর্বোচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর প্রকাশনার ভিত্তিতে ক্রমানুসারে তাদের নাম ও ছবি স্থান পেয়েছে বিভিন্ন মাসে। এতো কিছু দেখলেও শিক্ষক বা ছাত্র রাজনীতি দেখার সৌভাগ্য/দুর্ভাগ্য আমার হয়নি। জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান সৃষ্টি আর জ্ঞান বিতরণ এই চক্রেই ছাত্র-শিক্ষক সকলেই আবদ্ধ। জাতীয় রাজনীতি অথবা সরকার পরিবর্তনের আঁচও কখনও দেখিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামান্য উত্তপ্ত করতে। শিকক্ষকদের মধ্যে কোনো প্রশাসনিক পদ প্রাপ্তির আগ্রহও তেমনটা দেখিনি, বরং শিক্ষা-গবেষণায় নিবেদিত প্রাণ অনেক প্রতিথযশা শিক্ষককে দেখেছি একটা আতংকের ভিতর থাকতে এই ভেবে যে কখন না জানি কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পড়ে আর তার শিক্ষা-গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটায় I উদাহরণস্বরূপ অন্য কোনো আগ্রহী প্রার্থী না পাওয়ায় আমার পিএইচডি সুপারভাইজারকে পরপর তিন টার্ম (৯ বছর) এগ্রিকালচার ফ্যাকাল্টির ডিন এর দায়িত্ব অনিচ্ছা সত্ত্বেও অদ্যাবধি পালন করতে হচ্ছে।  

আমার অবস্থানকালীন সময়ে দুই বার ভাইস চ্যান্সেলর পরিবর্তন/নিয়োগ হয়েছে কিন্তু সেটা নিয়ে শিক্ষক-ছাত্র-স্টাফদের মধ্যে কখনও দেখিনি বিন্দুমাত্র আগ্রহ বা উত্তাপ I ভাইস চ্যান্সেলর কে হলেন/হবেন সেটা নিয়ে অনাগ্রহের মূল কারণ হলো এতে কারোই কিছুই এসে যায়না, লাভ-ক্ষতির কোনো হিসাব নাই। ভাইস চ্যান্সেলর এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এর নীতি-নির্ধারণীতে কোনো ব্যাপক পরিবর্তন আসেনা, তিনি শুধু তার কর্মকালীন সময়ে পূর্ব নির্ধারিত কৌশলগত পরিকল্পনার (strategic plan) একটি অংশ বাস্তবায়ন করবেন মাত্র। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাইস চ্যান্সেলর-এর কদাচিৎ দেখা মেলে, তিনি ব্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশন-ভিশন বাস্তবায়ন আর ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের উন্নয়ন নিয়ে। কারণ তার জবাবদিহিতা এবং মূল্যায়ন এর মাপকাঠি হলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাঙ্কিং এ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের তিনি কতটা উন্নতি (upgrade) ঘটিয়েছেন তার উপর, অন্য কিছুই নয় I আরও যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মূল্যায়িত হয় সেগুলির মধ্যে রয়েছে সম্প্রসারণ কার্যক্রম, ইন্টারন্যাশনাল কলাবরেশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিংকেজ, কমিউনিটি সার্ভিস এবং পেটেন্টকৃত প্রযুক্তি। দিন শেষে একজন শিক্ষকের মূল্যায়নও হবে পোস্ট-গ্রাজুয়েট ছাত্রের সংখ্যা, প্রকাশনা, সাইটেশন, আন্তর্জাতিক লিংকেজ, সেমিনার/কনফারেন্সে অংশগ্রহণ, পেটেন্টকৃত প্রযুক্তি, কমিউনিটি সার্ভিস, ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক মূল্যায়ন এই বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করেই। এইসবের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও চাপের মধ্যে থাকতে হয় বিধায় অন্য কোনো নন-একাডেমিক বিষয়ে মনোযোগ দেবার কোনো সময় বা আগ্রহ কোনোটাই তাদের নেই। আর এইসব অর্জন তখনই সম্ভব যখন শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সকল মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখবে জ্ঞানার্জন এবং গবেষণা কর্ম; তারা সেটা করে বলেই UPM সহ মালয়েশিয়ার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলি ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে I

উদাহরণস্বরূপ QS World University Ranking অনুযায়ী UPM ২০১৫ সালের ৩৭৬ তম অবস্থান থেকে মাত্র ৫ বছরে ২১৭ ধাপ এগিয়ে ২০২০ সালে ১৫৯ তম অবস্থানে চলে এসেছে। এগ্রিকালচার ডিসিপ্লিন বিবেচনায় UPM এর বিশ্ব রাঙ্কিং এ অবস্থান ৪২। শুধু UPM নয়, মালয়েশিয়ার আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এর উপরের দিকে জায়গা করে নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে UM, USM, UKM, UTM ইত্যাদি। এর মূলে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ, এলামনাই, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনার ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের নিবেদিত পরিশ্রম এবং সর্বোপরি সরকারের কার্যকর পলিসি ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। অথচ বাকৃবি সহ আমাদের দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থান আজ কোথায়? গর্বিত হই যখন দেখি ৬০/৭০ এর দশকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)-এর ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত মালয়েশিয়ান গ্রাজুয়েটদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত UPM এর ভেটেরিনারি মেডিসিন এন্ড এনিম্যাল সাইন্স অনুষদ এর অবস্থান আজ কত উচ্চে; কিন্তু মনটা খারাপ হয় তখনই যখন দেখি পঞ্চাশোর্ধ বয়সের বাকৃবির অবস্থান ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এ খুঁজে পাওয়া যায়না। এই দায় কার? পরস্পরকে দোষারোপ আর কাদা ছোঁড়াছুড়ি করে এর উত্তর কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবেনা।

আমাদের শিক্ষক, ছাত্র কারোই তো মেধা আর দক্ষতার ঘাটতি নেই, তাহলে সমস্যা কোথায় ? কোন অদৃশ্য অপশক্তি আমাদের কেবলই পিছু টেনে ধরছে? এর জন্য প্রয়োজন আত্মোপলব্ধি, ভিশন, মিশন, কার্যকর নীতিমালা, কৌশলগত পরিকল্পনা আর সকলের নিবেদিত ও নিঃস্বার্থ কর্মপ্রয়াস; তবেই সাফল্য নিশ্চিত। সবার আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বিভিন্ন বিভাগ/অনুষদ/ইনস্টিটিউট গুলির মধ্যে এবং একই সঙ্গে শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণা ও প্রকাশনা ভিত্তিক সুস্থ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা এবং সেটার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান; অপরদিকে UGC এর তত্ত্বাবধানে  আন্তঃ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতি বছর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘UGC University Ranking’ প্রকাশ  নিশ্চিত করা।  

খেলাধুলায় যেমন আন্তর্জাতিক সাফল্যের জন্য প্রয়োজন একটি মজবুত ঘরোয়া কাঠামো এবং নিয়মিত ক্লাব, ঘরোয়া জাতীয় লীগ আয়োজনের ও ভালো খেলোয়াড়দের পৃষ্ঠপোষকতার; একইভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক মান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলির মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও মেধাবী ছাত্র ও কৃতি শিক্ষক/গবেষকদের পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত জরুরি।  আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা যদি সত্যিই আন্তরিকভাবে বাকৃবি সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এর উপরের সারিতে দেখতে চাই তবে আমরা তা অবশ্যই পারবো, কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা আসলেই চাই কিনা ?  

এবার আসি আসল কথায়, ভূমিকাটা একটু বড়ই হয়ে গেল তবে সেটা দরকার ছিল; ভূমিকাটাই এখানে অধিক গুরুর্ত্বপূর্ণ। গত ৩০ জুন হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটা পোস্ট নজরে এলো। পোস্টটি দিয়েছেন UPM এর সদ্যবিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর দাতিন পাদুকা দাতো ড. আইনি ইদ্রিস, সৌভাগ্যক্রমে উনার সীমিত সংখ্যক ফেসবুক ফ্রেন্ডদের মধ্যে আমিও একজন। ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে শেষ কর্মদিবস পালন করে ফেসবুকে তিনি UPM এর সকল শিক্ষক, স্টাফ, ছাত্র-ছাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্দেশ্যে একটি বিদায়ী নোট পোস্ট করেন (৩০ জুন ২০২০)।  সেই পোস্টটিই আমার আজকের লেখার মূল বিষয়। তার আগে প্রফেসর আইনি ইদ্রিস সম্পর্কে একটু বলে নেয়া প্রয়োজন মনে করছি। ভদ্রমহিলা UPM এর ভেটেরিনারি অনুষদের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক, খ্যাতিমান গবেষক এবং তার প্রশাসনিক দক্ষতা এবং সফলতাও অত্যন্ত ঈর্ষণীয়। ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে সাড়ে চার বছর সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পূর্বে তিনি ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডেপুটি ডিন (৯ বছর), গ্রাজুয়েট স্কুলের ডিন (৮ বছর) এবং ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর (৫ বছর) I সবকিছুর ঊর্ধ্বে তিনি অসম্ভব বিনয়ী, ছাত্র-বান্ধব এবং অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী। বাংলাদেশের যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী তাঁর কাছে এমএস /পিএইচডি করেছেন তাদের কাছে তিনি ছিলেন মাতৃসম। এখানে উল্লেখ্য যে, তিনি বিভিন্ন কনফারেন্স/সেমিনারে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবার এসেছেন এবং আমার জানামতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও তিনি পরিদর্শন করেছেন।

সেই পোস্টে তিনি সংক্ষপে সুদীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে আন্তরিক ভাবে তাঁর পাশে থাকার জন্য সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক সহকর্মী, স্টাফ, এলামনাই, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনার, কোলাবোরেটর সহ সকল স্টেকহোল্ডারদের ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে তিনি UPM কে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে তাঁকে সক্রিয় ও আন্তরিক সযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি আবার শিক্ষক হিসাবে ফিরে যান তার নিজ বিভাগে। তাঁর দেয়া আর একটি সচিত্র ফেইসবুক পোস্ট (২ জুন ২০২০) হতে দেখা যায় যে কিভাবে বিভাগীয় স্টাফ ও শিক্ষকগণ তার অফিস কেবিনের প্রবেশ দ্বারে তোরণ বানিয়ে এবং ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগত (Welcome Back) জানান। তাঁর ফেইসবুক টাইমলাইনও গত কয়েকদিনে শতশত অভিনন্দনে সিক্ত। আমি এখানে তাঁর সেই পোস্ট এর কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরছি:

I'm on leave today after completing my term as the 8th Vice Chancellor of UPM, for 4 years and 6 months, yesterday, 30 June 2020. It has been a very interesting and fruitful journey, though I had to go through many challenges and constraints, especially financial constraints for the university.

Alhamdulillah, with the support of my strong and dedicated management team, all Warga UPM, students (local and international), alumni, our stakeholders, our industry partners, media and our strategic partners, overseas included, UPM has come out stronger and successful day by day, as in our Vision, University of International Repute....Thank you very much everyone! You made my day!!! I left the post yesterday with beautiful and sweet memories....... It is time now to spend more quality time with family and friends....The photos show how I spend my leave, at home today, attending to documents that came to VC's office yesterday and I didn't have time to attend to, due to very packed programs. Of course my signatures today are dated 30 June... only for today, for documents that were received yesterday....he he...Thank you everyone. Enjoy your work and your day!

এবার আসুন কল্পনা করি বাংলাদেশের একজন বিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলরের শেষ কর্মদিবস এবং তাঁর ভাইস চ্যান্সেলর পরবর্তী কর্মজীবন। কয়জন ভাইস চ্যান্সেলর তাঁর শেষ কর্মদিবসটি উপভোগ করেছেন এবং দায়িত্ব পালন শেষে সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের অথবা তাঁর সহকর্মী/বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ধন্যবাদ পাবার সুযোগ পেয়েছেন?  কতজন ভাইস চ্যান্সেলর দায়িত্ব পালন শেষে আবার তাঁর স্বাভাবিক শিক্ষক জীবন ফিরে পেয়েছেন এবং তাঁর সহকর্মীদের দ্বারা বিভাগে সাদরে গৃহীত হয়েছেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বা কয় জন ভাইস চ্যান্সেলর কে তাঁর সফলতার জন্য যথাযথ সম্মাননা এবং বিদায় সম্বর্ধনা দিয়েছে? বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক অবসরের পর  তার সহকর্মী/স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিদায় সম্বর্ধনা পান, তাঁর সম্মানে মানপত্র পঠিত হয়, তাঁর সফলতা/অর্জন ও গৌরবময়  কর্মজীবন সম্পর্কে সহকর্মীগন আলোচনা করেন, পরিশেষে সামান্য হলেও কিছু উপহার প্রদানের মাধ্যমে তাঁকে সম্মানিত করা হয় এবং এভাবেই তাঁর সুদীর্ঘ কর্মজীবনের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।   

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলর এর জন্য আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই কল্পনাতীত। এতটা সৌভাগ্য হয়তোবা হাতে গোনা কয়েকজন ভাইস চ্যান্সেলর এর হয় এবং সেটাকে ব্যতিক্রম হিসাবেই ধরতে হবে I বাকৃবিতে সেই ১৯৯০ সাল হতে অদ্যাবধি সুদীর্ঘ ৩০ বছরের আমার অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলে । এর কারণ অনুসন্ধানে হয়তো এক এক জন এক এক তত্ত্ব হাজির করবেন কিন্তু আমরা যে তত্ত্বেই বিশ্বাস করিনা কেন দিন শেষে দায়টা কিন্তু শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন/কর্তৃপক্ষের তথা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের উপরই বর্তায়। ভাইস চ্যান্সেলর থাকাকালীন যিনি পরম পূজনীয়, দায়িত্ব পালন শেষেই তিনি কিভাবে এক দিনের মধ্যেই অচ্ছুৎ হয়ে যান? এটা কি গবেষণার বিষয় নাকি কারণটা আমাদের কাছে দিবালোকের মতোই পরিষ্কার। এর দুটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে;   সবসময় ‘অদক্ষ/অযোগ্য’ ব্যাক্তিগনই ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে নিয়োগ পান অথবা দক্ষতা/যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে তাঁরা সফলতা পাননা এবং জনপ্রিয়তা হারিয়ে অধিকাংশের বিরাগভাজন হন।

উপরোক্ত কোনও কারণকেই প্রশ্নাতীত ভাবে মেনে নেবার কোনো সুযোগ নেই। তবে কারণ যেটাই হোক একটি বিশ্ববিদ্যালয় কে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে একজন ভাইস চ্যান্সেলর এর অবদানকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, তিনি অবশ্যই এই কৃতিত্বের দাবিদার (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, তবে ব্যতিক্রম থাকতেই পারে)I কিন্তু আমরা ভাইস চ্যান্সেলর এর দায়িত্বকে মোটা দাগে একটা ‘Thankless Job’ এ পরিণত করেছি। ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এ হয়তো বা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান হতাশাজনক, কিন্তু জাতি গঠনে ও দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। উদাহরণস্বরূপ দেশ যে আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তা বাকৃবি সহ দেশের অন্য সকল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ও বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে কর্মরত ঐ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের লব্ধ জ্ঞান, অর্জিত দক্ষতা ও নিরলস পরিশ্রমের সম্মিলিত ফলাফল। অন্যান্য সাধারণ ও বিশেষায়িত/প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলিও স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদানের মাধ্যমে দেশকে আজ এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আর এই অর্জন তো আর রাতারাতি আসেনি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সামগ্রিক অর্জন তা বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালনরত ভাইস চান্সেলরদের নেতৃত্বেই ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকতা-কর্মচারিদের নিবেদিত প্রয়াস এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে; তাহলে একজন ভাইস চ্যান্সেলরকে তাঁর প্রাপ্ত কৃতিত্বটুকু আনুষ্ঠানিকভাবে দিতে আমাদের এতো কার্পণ্য কেনো ? কেউই ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা বা ভুলত্রূটির (ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত) ঊর্ধ্বে নয়, তাই বলে কি তিনি দায়িত্ব পালন শেষে তার অর্জনের জন্য সামান্য ধন্যবাদ টুকুও পাবেন না? যে কোনো মূল্যেই আমাদের সকল ধরনের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে এই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, নতুবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মও আমাদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন/কৃতিত্বকে  এইভাবেই অবমূল্যায়ন করবে।

এবার আসি আমার স্বপ্নের প্রসঙ্গে। আমি স্বপ্ন দেখতে চাই এবং স্বপ্ন দেখিও; ঘুমিয়ে যেমন দেখি তেমনি জেগেও দেখি।  অনেক স্বপ্নের মধ্যে আমি এই স্বপ্নটি বিশেষ ভাবি দেখি যে, বাকৃবি'র সৈয়দ নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়াম এ হল ভর্তি ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকতা-কর্মচারিদের উপস্থিতিতে আমরা একজন সদ্য বিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলর কে বিদায় সম্বর্ধনা দিচ্ছি। তাঁর পরিবারের গর্বিত সদস্যগণ সামনের সারিতে বসে আছেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে মানপত্র পাঠ হচ্ছে I সকলেই তাঁর গৌরবোজ্জ্বল কর্মজীবন, শিক্ষা ও গবেষণায় কৃতিত্বপূর্ণ অর্জন, বিশ্ববিদ্যালয় এর উন্নয়নে অসামান্য অবদান এবং সর্বোপরি তাঁর অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের উপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখছেন। এর পাশাপাশি চলছে তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ও কর্মকান্ডের গঠনমূলক সমালোচনা ও নতুন ভাইস চ্যান্সেলর এর করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা I অবেশেষে বহুল কাঙ্খিত বিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলর এর আবেগময়ী ও দিকনির্দেশনামূলক জ্ঞানগর্ভ ভাষণ; বিদায়ী ভাষণে তিনি তাঁর দায়িত্বপালনকালে সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেবার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞচিত্তে  আন্তরিক ধন্যবাদ দিলেন এবং তাঁর সীমাবদ্ধতা, অক্ষমতা ও নির্দিষ্ট কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করলেন। একই সঙ্গে বাকৃবি কে নিয়ে তাঁর অসম্পূর্ণ স্বপ্ন ও বাকৃবি কে তিনি বিশ্ব পরিসরে যে অবস্থায় দেখতে চান তার জন্য নতুন ভাইস চ্যান্সেলর ও বাকৃবি প্রশাসন কে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে তুমুল করতালির মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। নতুন ভাইস চ্যান্সেলর তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বাকৃবি কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে আসার জন্য বিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলর এর নেতৃত্ব ও অবদানকে কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন এবং সকলের সযোগিতার মাধ্যমে তাঁর অসুম্পর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সর্বশেষে নতুন ভাইস চ্যান্সেলর এর অনুরোধে উপস্থিত সকলেই একযোগে দাঁড়িয়ে বিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলরকে শ্রদ্ধা জানান। তুমুল করতালির মধ্যেই বিদায়ী ভাইস চ্যান্সেলর আনন্দাশ্রু মুছতে মুছতে দ্রুত অডিটোরিয়াম ত্যাগ করেন, কারণ তাঁর জন্য আরো দুইটি সম্বর্ধনা অপেক্ষা করছে: একটি অনুষদের পক্ষ থেকে আর একটি তাঁর প্রাণপ্রিয় বিভাগের পক্ষ থেকে I

লেখক:অধ্যাপক
এগ্রো ইনোভেশন ল্যাবরেটরি, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.

ফোকাস

BLS-এর নবম সাধারণ সভা ও নিরাপদ...

on 22 March 2024

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির আয়োজনে নিরাপদ আমিষ তৈরিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার ও বি এল এস এর নবম সাধারণ সভা আ...

                 

সমসাময়িক

Huawei Hosts Annual Data Cente...

Agrilife24.com: Recently Huawei hosted its annual Data Center Ceremony 2024 at Huawei Bangladesh Academy, showcasing remarkable achievements and recognizing outstanding partn...

ফার্ম টু ডাইনিং

সংকটপ্রবণ এলাকায় ৩ লাখ মানুষের...

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সম্প্রতি ‘প্রবাহ’-এর স্থাপন করা ছয়টি পরিশোধন প্ল্যান্টের মাধ্যমে নিরাপদ ও সুপেয় পানি পাচ্ছেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্য দিয়ে, ২৩টি...

              

বিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রি

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়...

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: দেশের দক্ষিণের অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকাটায় Sky Tech Agro Pharma সম্প্রতি তিন দিন ব্যাপি "বার্ষিক বিক্রয় সম্মেলন -২০২৪ "-এর আয়োজন করে। সা...