দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যার এক বছর: রেড ক্রিসেন্ট ও আইএরআরসির সহায়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষাধিক বন্যাকবলিত মানুষ

Category: ফোকাস Written by Shafiul Azam

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: ২০২৪ সালের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার এক বছর পর নতুন জীবন ও জীবিকায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তিন জেলা নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ৩ লাখ ২ হাজারের বেশি মানুষ। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস), ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) ও পার্টনারদের সহযোগিতায় চলতি অক্টোবর পর্যন্ত জীবিকা, গৃহায়ণ, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসসহ নানান উদ্যোগের মাধ্যমে এই অঞ্চলের হাজারো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জীবন, জীবিকা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে।

বন্যার প্রথম দিন থেকেই রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররা বন্যাকবলিত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ধার কর্মসূচীর পাশাপাশি জরুরি খাবার পানি, খাদ্য ও নগদ সহায়তা পৌঁছে দেয়। এর মাধ্যমে ১ হাজারেরও বেশি পরিবারের বাড়ি মেরামত ও পুনর্নির্মাণ এবং প্রায় দেড় হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর পায়খানা নির্মাণ করা হয়েছে। টেকসই জীবনব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রায় ১,১০০ পরিবারের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যাকালীন সময়ে জরুরি সহায়তার অংশ হিসেবে ৪৭,৪৯২ পরিবারকে ৬ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী পরিবারকে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নদগ সহায়তা।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সবুজায়নের লক্ষ্যে, স্থানীয়দের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ১ লক্ষেরও বেশি গাছের চারা ও ১৪ হাজার প্যাকেট শাক-সবজির বীজ। নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে ১৫টি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ, ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৬৭০টি টিউবওয়েল মেরামত ও নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে।

নোয়াখালীর রুবিনা খানম বন্যায় পর সব হারিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'বন্যায় আমার ঘরবাড়ি সব ভাইসা গেছিল। পানি বেশি থাকায় পরিবার নিয়া আমরা রাস্তায় উঠি। আমার স্বামী অসুস্থ, কাজ করতে পারেন না। তিন বাচ্চার মধ্যে দুজন প্রতিবন্ধী। রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় আমি বাড়ি তৈরি করছি, পায়খানা বানাইছি। জীবিকার জন্য যে টাকা পাইছি আমরা, তা দিয়া আমার বড় পোলা বাজারে মাছ বিক্রি কইরা উপার্জন করে। এখন আর আমার ভিক্ষায় যাওয়া লাগে না। বাচ্চাগুলোর জন্য ওষুধ কিনতে পারি। তিনবেলা খাইতে পারি।'

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের মহাসচিব ড. কবির এম. আশরাফ আলম বলেন, 'বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যেকোন দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকে। আইএফআরসি ও অন্যান্য পার্টনারদের সহায়তায় আমরা হাজারো বন্যার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি, তাদের জীবন পুনর্গঠনে সাথে থাকতে পেরেছি। আমাদের ভলান্টিয়ার ও কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।'

আইএফআরসি বাংলাদেশের হেড অব ডেলিগেশন আলবার্টো বোকানেগ্রা বলেন, 'বন্যার্ত মানুষের দৃঢ়তা ও সাহস সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। আমরা বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সবসময় পাশে আছি, যেন ভবিষ্যৎ যেকোন সঙ্কটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানুষ আরো সক্ষম হয়।'
এর আগে বন্যার সময় জরুরিভিত্তিতে আইএফআরসি ও রেড ক্রিসেন্ট বন্যার্তদের মাঝে ৫,৬৯,০০০ লিটার নিরাপদ খাবার পানি, ২,৪৮,৭০০ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, প্রায় ৭০,০০০ মানুষের জন্য রান্না করা খাবার এবং ৬০,০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এ সময় ১৬টি মোবাইল মেডিকেল টিম ২৭,০০০ রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে, ৩,৬৮১ জনকে মানসিক সেবা প্রদান করা হয়েছে। রোগ সংক্রমণ রোধে ১,৫৫,০০০ ওরস্যালাইন এবং ১৮,০০০ ডেঙ্গুজ্বর পরীক্ষার কিট বিতরণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় ১১ জেলার প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৭৪ জন নিহত এবং প্রায় ১৪,০০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।