ফিসটেক ল্যাবরেটরির শুভ উদ্বোধন

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:মৎস্য ও চিংড়ির নানাবিধ রোগ নির্ণয়,সংশ্লিষ্ট খামারের মাটি-পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি পুকুরের সঠিক সমস্যা নিণর্য়ের মাধ্যমে,মৎস্য ও চিংড়ি চাষীদেও কাঙ্খিত উৎপাদন ও লাভ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, গত বৃহষ্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) খুলনায় বাংলাদেশের প্রথম আরটি-পিসিআর (রিয়াল-টাইমপলিমারেজ চেইনরিয়েকশান) ভিত্তিক মলিকুলার ল্যাবরেটরি- ফিসটেক ল্যাবরেটরি এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। ল্যাবরেটরিটি ইউএসএআইডি সহ অর্থায়নে ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ অ্যাকোয়াকালচার অ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানওয়ার্ল্ড ফিশ এবং ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড।

আরটি-পিসিআর এর মাধ্যমে মাছ ও চিংড়ির ১১ ধরণের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি, মাটি ও পানির ১৮ টি গুণাবলির পরীক্ষার-নিরীক্ষার জন্য ল্যবরেটরিটিতে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যন্ত মানসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদিও ব্যবস্থা করা হয়। মৎস্য ও চিংড়ি রোগের মারাত্বক প্রাদুর্ভাবের কারণে খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিন দিন চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যে কারণে চিংড়ি থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বর্তমানে নিম্নমূখী। এমতাবস্থায়, মাছ ও চিংড়ির পুকুরের সমস্যা নিয়ে নিঁখুত গবেষণা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে এই শিল্পের সাথে জড়িত সকল হ্যাচারি, নার্সারি ও মজুদ চাষের পুকুরের কথা বিবেচনায় রেখে, উভয় প্রতিষ্ঠান ল্যাবরেটরিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। যেখানে নূন্যতম মূল্যেও মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সেবা নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট সকলেই।

উক্ত প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে রয়েছেন, থাইল্যান্ডের মাহিদোল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইক্সিলেন্স অব শ্রিম্প এর প্রধান গবেষক ড. শেংচান সেনাপিন। প্রকল্পের সমন্বয়ক রয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও মৎস্য ও চিংড়ি রোগ বিদ্যার স্বনামধন্য গবেষক ড. মীর মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। পরীক্ষাগারটিতে নিবিড়ভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন দুইজন টেকনিসিয়ানকে নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়েছে। ফিসটেক ল্যাবরেটরি এর প্রফিসিয়েন্সি টেস্ট ও যৌথ গবেষণা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক রয়েছে আরো দুইটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্স ল্যাবরেটরি এর সাথে। এ ল্যাবরেটরি বাংলাদেশের মৎস্য ও চিংড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগে একটি যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

উক্ত পরীক্ষাগার উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিনাঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশের মৎস্য চাষে ব্যাপক উন্নতি সাধন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিধিবৃন্দ। পরীক্ষাগার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড এর চেয়ারম্যান জনাব খন্দকার ফরহাদ হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফিসটেক (বিডি) লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ আতাউল করিম ভূঁইয়া, পরিচালক জনাব মোহাম্মদ তারেক সরকার (গবেষণা এবং উন্নয়ন) এবং প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও চিংড়ির আধা-নিবিড় চাষ ব্যবস্থাপনায় রোগ নির্ণয়ের জন্য আধুনিক পরীক্ষাগারের প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মীর মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।

মৎস্য অধিদফতর ও খুলনাবিভাগের সম্মানিত কর্মকর্তা ও ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব আবু সাইদ, জনাব আবদুর রাজ্জাক, উপপরিচালক (মাছপরিদর্শনও গুণ নিয়ন্ত্রণ) এবং জনাব এবিএম জাকারিয়া, কোয়ারেন্টাইন অফিসার, (ফিশপরিদর্শন) ও মাননিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ আবদুর রউফ, প্রধান, মৎস্য ও সামুদ্রিক সম্পদ প্রযুক্তি বিভাগের, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মোঃ গোলাম সরোয়ার উপস্থিত ছিলেন এবং পরীক্ষাগারের সম্ভাবনা সম্পর্কে মন্তব্য করেন।



ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ অ্যাকুয়াকালচার অ্যাক্টিভিটি, ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশর পর্যবেক্ষণ মূল্যায়ন ও শিক্ষণ বিশেষজ্ঞ ফাতিমা শাহিন কাশফী অংশ নিয়ে বলেন "USAID এর অর্থায়নে WorldFish এর বাস্তবায়নে Feed the Future Bangladesh Aquaculture Activity প্রকল্পের আওতায় ফিসটেক কর্তৃক বাস্তবায়িত দেশের প্রথম বেসরকারী ও প্রাইভেট খাতের এই পরিক্ষাগারটি আণবিক পর্যায়ে মৎস্য রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মাটি ও পানির গুনাগুন পরীক্ষা করতে সক্ষম। এই পরীক্ষাগারের শুভ উদ্বেধন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি এর উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।"
 
পরে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোসুম্মাথ হোসনাআরা জনাব খন্দকার ফরহাদ হোসেন এবং চেয়ারম্যান ফিশটেক (বিডি) লিমিটেডসহ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের বেশ কিছু মৎস্য চাষি, মৎস্য সংশ্লিষ্ট সকল উদ্যোক্তা এবং আগত অতিথি বৃন্দের উপস্থিতিতে ফিতা কেটে পরীক্ষাগারের উদ্বোধন করেন।