সফল ভেড়া খামারীদের খামার পরিদর্শন ও মতবিনিময় করলেন কেজিএফ এর নির্বাহী পরিচালক

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের তত্বাবধানে পরিচালিত “ভেলিডেশন অব গুড প্রাকটিসেস অব অন-ফার্ম ল্যাম্ব প্রোডাকশন সিস্টেমস” প্রকল্পের সফল খামারীদের খামার সরেজমিনে পরিদর্শন করে তাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন কেজিএফ এর নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস।  

সম্প্রতি প্রকল্পের সফল খামারীদের সফলতার বর্ণনা শুনে নির্বাহী পরিচালক মহোদয় অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং প্রকল্পের খামারীদের খামার পরিদর্শন ও তাদের সাথে মত বিনিময়ের উদ্দেশ্যে বিশটি খামার পরিদর্শন করেন। খামারগুলি পরিদর্শন করে তিনি সরাসরি খামারীদের সাথে কথা বলেন। খামারীদের সাথে কথা বলে তিনি জানতে পারেন যে, ভেড়া পালন করে অধিকাংশ খামারীই বিগত ১ বছর সময়ে ৫০০০০/ টাকার অধিক আয় করেছেন। তাদের কাছে বর্তমানে যে সংখ্যক ভেড়া আছে খামারীভেদে তার বর্তমান বাজার মূল্য  ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা।

খামারীরা বলেন যে, ভেড়া পালন করে তাদের পারিবারিক দৈন্যদশা উল্লেখযোগ্যভাবে লাঘব হয়েছে। অনেক খামারী ভেড়া বিক্রির আয় দিয়ে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন, কেউ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ভেড়া পালনপূর্ব গৃহিত ঋণ পরিশোধ করেছেন, চিকিৎসার খরচ যুগিয়েছেন, ঘর ও ল্যাট্রিন ঠিক করেছেন, খাবার পানির জন্য নলকুপ বসিয়েছেন, জমি বর্গা নিয়েছেন, ২ জন খামারী বসবাসের জন্য জমি ক্রয় করেছেন, ৫ জন খামারী অধিক আয়ের জন্য গরু ক্রয় করেছেন বলে জানান। ভাগ্যোন্নয়নের কথা বলার সময় খামারীদের বেশ কয়েকজন আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন ও ভেড়া পালনে সার্বিক সহায়তা করার জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নির্বাহী পরিচালক মহোদয় অপেক্ষাকৃত কম সফল কয়েকজন খামারীর সাথে আলাপ করে তাদের ব্যর্থতার কারন নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। তিনি ব্যর্থ খামারীদের কাছে সফল খামারীর সফলতার বর্ণনা দিয়ে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেন। ব্যর্থ খামারীগণ তাদের ব্যর্থতা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে সফল হবার প্রয়াস পান এবং আগামীতে সফল হবার প্রত্যাশায় আন্তরিকভাবে ভেড়া পালনে মনোনিবেশ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

খামার পরিদর্শনের সময় লক্ষ্য করা যায় যে, প্রকল্পের খামারীদের সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে আশেপাশের অনেকে ভেড়া পালন শুরু করেছেন। নির্বাহী পরিচালক বিশষভাবে লক্ষ্য করেন যে, ভেড়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প থেকে নির্মিত ঘরে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশী সংখ্যক ভেড়া রাখা হচ্ছে। এইজন্য তিনি ঘরের আকার বড় করা, নির্দিষ্ট সংখ্যক ভেড়া রেখে বাকীগুলো বিক্রি করা এবং আগ্রহী অন্য খামারীদেরকে বর্গা দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।

খামার পরিদর্শনের সময় প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ আবুল হাশেম, মূখ্য গবেষক- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ জালাল উদ্দিন সরদার, কো-আই ও  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আখতারুল ইসলাম, কে-আই ও ডেপুটি চীফ ভেটেরিনারি অফিসার ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ, শেরপুর জেলার পার্টনার এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মান্নান ভাসানী, শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম শাহ, পিএইচডি ফেলো মোঃ ইসমাইল হক ও আনোয়ার হোসেন, ফিল্ড এসিটেন্ট মোঃ জাহিদ হাসান উপস্থিত ছিলেন।

প্রফেসর ড. মোঃ আবুল হাশেম বলেন যে, কো-অর্ডিনেটিং প্রকল্প হওয়ায় এক অঞ্চলের খামারীদের সফলতা ও ব্যর্থতা অন্য অঞ্চলের খামারীদেরকে অবহিত করার প্রয়োজন ও সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে সকল অঞ্চলের দূর্বলতাগুলো চিহ্নিত হবে এবং তা দূর করার মাধ্যমে সকল অঞ্চলের ভেড়া পালনের ক্ষেত্রে কাংখিত সফলতা আসবে।

প্রফেসর জালাল বলেন যে, প্রকল্পভুক্ত রাজশাহী জেলার ২টি উপজেলায় প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানোর ফলে দৃশ্যমান সফলতা অর্জিত হয়েছে, তবে বাচ্চা মৃত্যুর হার অর্জিত সফলতাকে অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে। বাচ্চা মৃত্যুর হার কমাতে পারলে ভেড়া পালন তথা গুনে ও মানে উৎকৃষ্ট মানের আমিষ সরবরাহের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের ভেড়ার রোগবালাই নিয়ে নিবীড় গবেষণা পরিচালনার প্রতি তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ব্যাপারে প্রকল্প প্রস্তাবনা পেলে তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কেজিএফ এর পক্ষ থেকে সম্ভব সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে হবে বলে ড. বিশ্বাস আশ্বস্থ করেন।