মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাকৃবি'র প্রফেসর ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান-এর দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:মুজিববর্ষ উপলক্ষে কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মো. সিদ্দিকুর রহমানের লেখা ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: সততা, মানবিকতা ও উন্নয়নের প্রতীক’ দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানি এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সাবেক মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাাস।

উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: মকবুল হোসেন, নেত্রকোণা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. শ্যামল কুমার পাল, ময়মনসিংহ ডিভিশনাল লাইভস্টক অফিসের পরিচালক ড. মো. আবু সাইদ সরকার, মিলিটারী ফার্ম ত্রিশালের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল ডা. পিযুষ কুমার বিশ্বাস, কেজিএফের প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট ডা. মো. মেহেদী হাসান ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব আলম।

সম্প্রতি মেডিসিন বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত গবাদি প্রাণী ও মানুষের ব্রুসেলোসিস রোগের মলিকুলার ডায়াগনসিস, চিকিৎসা ও প্রতিকার শীর্ষক কেজিএফ এর সমাপনী কর্মশালা শেষে বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ বইটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মস্থান, বংশ পরিচয়, পারিবারিক পরিচয়, ছাত্রজীবন, মন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু উপাধি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, দলের প্রধান, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বঙ্গবন্ধুর যে আত্মীক সম্পর্ক তা তুলে ধরা হয়েছে।‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ এ দুটি নাম, দুটি শব্দ একে অপরের পরিপূরক, যা আজ ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। একটিকে ছাড়া অপরটি যেন মূল্যহীন। পিতা ছাড়া সন্তান যেমন কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও বাংলাদেশের কথা কল্পনা করা যায় না।

বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে সমগ্র বাঙালি জাতি আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, যেখানে থাকবে না কোনো ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি, নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা আর ধর্মীয়গোঁড়ামি। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং সারা পৃথিবীর শান্তির স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের সাধারণ জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর। তিনি বাংলাদেশ আর বাংলার মেহেনতি মানুষকে নিয়ে আমৃত্যু স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বলতেন, ‘আমার সবচেয়ে প্রধান শক্তি হলো আমার দেশের জনগণ, আর আমার প্রধান দুর্বলতা হলো আমি তাদের অনেক বেশি ভালোবাসি’। তিনি ভালোবাসা দিয়ে সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি বাঙালি জাতিকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা যদি অব্যাহত থাকত তাহলে এরই মাঝে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিতে পারত। বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তার রাজনৈতিক মতবাদ ছিল, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’। আর এরই মাধ্যমে তিনি সারা পৃথিবীতে শান্তি  প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালরাত্রে ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত হয় বঙ্গবন্ধু পরিবার, সৌভাগ্যক্রমে বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “When God closes all the door, somehow He opens the window”. বাঙালি জাতির পরম সৌভাগ্য যে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্ম, পারিবরিক ও শিক্ষা জীবন, অর্জিত ডিগ্রি ও ফেলোশিপ, আন্তর্জাতিকভাবে প্রাপ্তপদক ও লিখিত বইসমূহ, সততা, মানবিকতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দুর্মর মানসিকতা, বিশেষ গুনাবলি ও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের অবদান নিয়ে লেখা হয়েছে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: সততা, মানবিকতা ও উন্নয়নের প্রতীক’ বইটি। শিক্ষা, খাদ্য, কৃষি, নারীর কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রযুক্তির উন্নয়নসহ নানা ধরনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ইডিবি, জাইকাসহ সব দাতা সংস্থা বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের উন্নয়ন দেখে এক অর্থে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে গণনা করা হচ্ছে। দেশের বর্তমান জিডিপি এখন ৮.১৫ শতাংশ। দারিদ্র্য বিমোচনের হার ২০.৫ শতাংশে এ নেমে এসেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশ আজ ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আগের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলারে উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ আজ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। এর পাশাপাশি মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ বেশ কিছু বৃহৎ প্রকল্প চলমান রয়েছে। বস্তুতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্নকে একে একে বাস্তবায়ন করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এরই মধ্যে জাতিসংঘের নির্ধারিত ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ অর্জন করেছে এবং বর্তমানে ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’ অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের ‘সাউথ-সাউথ’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আজ আর সত্য হতে বেশি দিন বাকি নেই, কারণ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে একে একে পূরণ করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, বাঙ্গালি জাতিসত্তার রুপকার, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বইটির লেখক। বাঙ্গালি জাতির হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, এই মহানায়কের আবির্ভাব ঘটেছিল ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। বঙ্গবন্ধু সদয় অনুধাবন পূর্বক কৃষিবিদদের ক্লাশ ওয়ান করার যৌক্তিক পাওনা দিয়ে কৃষিবিদদের চিরকৃতজ্ঞ করে গেছেন। একজন কৃষিবিদ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্যক্তিগত ও পেশাগত সে ঋণের স্মারক হিসেবে বই দুটি লিখতে অণুপ্রানিত হয়েছেন।

বই দুটির লেখক কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলাধীন ভাটিয়াপাড়ার বরাশুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আমেরিকার টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বোরলগ ফেলোশিপ ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। জাপান, কোরিয়া, ব্রাজিল ও জার্মানি থেকে ২ বার করে মোট ৮ বার পোস্টডক্টরাল সম্পন্ন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও সিঙ্গাপুর থেকে একাধিকবার ঊচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন। প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের বিশেষ গবেষনা অনুদানের চেক ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ আবদুল হামিদ এর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন স্বর্ণ পদক গ্রহণ করেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ জিল্লুর রহমান ও প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের কাছ থেকে যথাক্রমে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স স্বর্ণ পদক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণ পদক গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “সেরা প্রকাশনা পুরস্কার-২০১২” অর্জন করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে “লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট এ্যাওয়ার্ড-২০১৯” ও মাননীয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে “কাশিয়ানী উপজেলার কৃতি সন্তান সম্মাননা পদক-২০২০” গ্রহণ করেছেন।

কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বাকৃবি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের পরিচালক ও ২ বার মেডিসিন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ২ জন উপসচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ জন কর্ণেল, ২ জন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ও ১ জন মেজর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তিনি  ২৩ টি বই ও প্রায় তিন শতাধিক প্রবন্ধের লেখক ও বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর মেডিসিন বিভাগে জেষ্ঠ্যতম ও সিলেকশন গ্রেড প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।