লকডাউনে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণনে কোনো ক্ষতি হবে না-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

Category: ফোকাস Written by agrilife24

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:করোনা লকডাউনে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদন, পরিবহণ ও বিপণনে কোন ক্ষতি হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এছাড়া করোনায় ও রমজানে মানুষের কাছে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম সহজলভ্য করার জন্য ভ্রাম্যমান বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

রবিবার (০৪ এপ্রিল) রাজধানীর সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, “করোনা থেকে বাঁচতে হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে শরীরের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটাতে হবে। আর পুষ্টি ও অমিষসমৃদ্ধ খাবারের সবচেয়ে বড় যোগান মাছ, মাংস, দুধ, ডিম থেকে আসে।” তাই এসব খাদ্যের উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণনে কোনো বাধা আসবে না।

সরকার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ইলিশ বেড়ে উঠার পথে কোনোভাবেই যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় সেজন্য যা যা করা দরকার আমরা করবো। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কর্মসূচি ৪ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পালন করা হচ্ছে। জাটকা আহরণ বন্ধকালে ইলিশ আহরণে জড়িতদের যাতে সমস্যা নয়, সেজন্য তাদের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তাদের খাবারসহ অন্যান্য সমস্যা যাতে না হয় সেটাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে আমরা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ব্র্যান্ডেড এবং পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সেরা মাছ ইলিশ উল্লেখ করে শ ম রেজাউল করিম এসময় বলেন, ‘ইলিশের উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। ইলিশ উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে আমরা প্রথম স্থানে রয়েছি। গত বছর আমাদের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। জাটকা রক্ষায় ও মা ইলিশ আহরণ বন্ধে জলে, স্থলে ও আকাশপথে বিভিন্নভাবে মনিটর করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।’

ইলিশের অভয়াশ্রমে জাটকা নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারা কারেন্ট জাল, বেহুন্দী জালসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জাল তৈরি করে জাটকা নিধন করে তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান ও জরিমানা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের সংবাদ বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম্বিং অপারেশনসহ বিভিন্নভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”

তিনি আরো যোগ করেন, “জাটকাসহ অন্যান্য মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলে এবছর ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে ১৫ দিনে ১৭ টি জেলায় মোট ৪৯২ টি মোবাইল কোর্ট ও ১ হাজার ৬৮১ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ২ হাজার ৪৪৮ টি বেহুন্দি জাল, ২৭৪.২ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল এবং ৩ হাজার ২৫৫ টি বেড় জাল, চরঘড়া জাল, মশারি জাল ও পাইজাল আটক করা হয়েছে এবং প্রায় ৯ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছি। প্রভাবশালী ব্যক্তিরাদের সাথে আমরাও ন্যুনতম সমঝোতা করিনি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওযা হয়েছে এবং অবৈধ জাল ধ্বংস করা হয়েছে।”

এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, “২০১৯-২০ অর্থবছরে জাটকা আহরণে বিরত ৩ লক্ষ ১ হাজার ২৮৮ টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসে ৪৬ হাজার ৭৭৮ মে.টন ভিজিএফ বিতরণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ম কিস্তিতে ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৮১৫টি জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে প্রদানের জন্য মোট ২৬ হাজার ৩০৫ মে.টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। কারণ আমাদের মৎস্যজীবীদের পরিবারের কথাও মাথায় রাখতে হয়। ভিজিএফ সহায়তার পাশাপাশি জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার জেলেকে চাহিদানুযায়ী নানা উপকরণ প্রদান করা হয়েছে।”

“জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কেউ যাতে জাটকা আহরণ করতে না পারে, আহরণের পৃষ্ঠপোষকতার জাল তৈরি করতে না পারে, ট্রলার চালাতে না পারে, ইলিশের অভয়াশ্রমে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখতে না পারে সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এমনকি মাছের বাজারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। কোনভাবে চোরাইপথে জাটকা আসলেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বরফ কল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দেশের যে বিস্তৃত এলাকায় ইলিশ উৎপাদন হয় সব জায়গায় ভূমিকা রাখতে না পারলেও আমরা চেষ্টা করছি কোন প্রান্তেই যেন জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে কেউ জাটকা আহরণ করতে না পারে।”-যোগ করেন মন্ত্রী।

ইলিশ সংরক্ষণে শুধু মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর নয়, সকলকে সম্পৃক্ত থাকতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “গণমাধ্যমকে এ সময় জনসচেতনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে হবে। নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, নৌবাহিনী, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে। এমন কি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। আমরা জাটকা ধরবো না। বড় ইলিশ তৈরির সুযোগ করে দেবো। আমরা বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করবো না। এটা হোক জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে আমাদের অঙ্গীকার।”

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, “মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় অতীতের তুলনায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় মোবাইল কোর্টের সংখ্যা এবং জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অবৈধভাবে মৎস্য আহরণকারী নেপথ্যের ব্যক্তিদেরও আমরা এখন আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। মৎস্যজীবীদের মধ্যে যারা ইলিশের সাথে সম্পৃক্ত তাদের এসময় তালিকা অনুযায়ী আমরা ভিজিএফ দিচ্ছি। এ তালিকা প্রতিবছর হালনাগাদ করা হচ্ছে।”

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।